মঞ্চ নিয়ে গেলেও অবস্থান তুলছি না
নামাজে যাওয়ার সুযোগে পুলিশ মঞ্চ তুলে নিয়ে গেলেও শান্তির সপক্ষের অবস্থানে অনড় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে আলাপকালে এ কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী।
খালেদা জিয়াকে অবরোধ প্রত্যাহার এবং প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার দাবিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) গত ২৮ জানুয়ারি থেকে মতিঝিলে নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
এ কর্মসূচি থেকে গতকাল ভোরে ৬ জন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আর শুক্রবার দুপুরে নেতাকর্মীদের নিয়ে জুমার নামাজ পড়তে গেলে মঞ্চ ভেঙে প্যান্ডেল, চেয়ার, টেবিল নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপরও কাদের সিদ্দিকী সেখানে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
মঞ্চ ভাঙার পর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার এখানে বসা নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের শান্তির জন্য, দেশে যাতে ভালো ভোট হয় সেজন্য বসা। একটি ভালো ভোটের মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসতে পারে। দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। তবুও মানুষের শান্তি চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার ঠাণ্ডার সমস্যা হয় তাই মঞ্চ করে উপরে কাপড় টানিয়েছিলাম। পুলিশ মঞ্চ নিয়ে গেছে এটা ভালো হয়েছে। তবে মঞ্চ তুলে নিলেও তো আমি আমার অবস্থান তুলছি না।’
সরকারের এই আচরণে অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভে সঙ্গে বঙ্গবীর বলেন, ‘স্বাধীনতার পর রাজধানীতে নারী হরণকারী দু’চারজনের বিচার আমার মাধ্যমে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছে, কাদের যা করেছে ভালো করেছে। যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতো তাহলে একবার হলেও বলতো– কাদের কী বলে একবার শুনি। এমনকি জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলেও শান্তির জন্য যেকোনো কথা শুনতো।’
পুলিশের মঞ্চ তুলে নেয়ার প্রতিক্রিয়ায় কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকার নিতে জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা, তখন তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আমার নিজের প্রচার করতে বসিনি। নিজের ছবি উঠানোর জন্য বসিনি। মূলত মানুষের শান্তির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সাক্ষাৎকার দেয়ার অনেক সময় আছে। পরে এক সময় সাক্ষাৎকার দেয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে শান্তি ফিরে আসে তাদের সঙ্গে বসা উচিৎ। সরকার গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই মানুষের শান্তির কথা বিবেচনায় আলোচনার বিকল্প নেই। তাই সরকারকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। মানুষের শান্তির জন্য নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করতে হবে।’
এসময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। ‘অবরোধ প্রত্যাহার কর, করতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে, বসতে হবে। মঞ্চ নিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, বন্ধ করা যাবে না। আমাদের দাবি মানতে হবে, জনগণের শান্তি আনতে হবে, আনতে হবে। কৃষক শ্রমিক জনতা গড়ে তোল একতা। চলছে লড়াই চলবে বঙ্গবীর লড়বে’- স্লোগান মতিঝিল এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে।
পুলিশ আগে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ মঞ্চ, চেয়ার টেবিল নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘পুলিশ কিছু নিলে একটা লিস্ট করে নেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু তারা এসব না করে হঠাৎ করে সব নিয়ে গেলো। এটা তাদের করা উচিৎ হয়নি।’
তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘আমি জুমার নামাজ পড়ে মানুষের শান্তি জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করেছি। অথচ এসে দেখি আমার অবস্থান কর্মসূচির মঞ্চ নিয়ে গেছে। যদি মঞ্চ ভেঙে নিলেও শান্তি ফিরে আসে তাহলে আসুক। তাতে ভালো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘যে লোকটা দেশে শান্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আবার দেশে শান্তির জন্য তিনি অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। কোনো কিছু না বলে তার অবস্থান কর্মসূচি থেকে মঞ্চ, প্যান্ডেল, চট, কাপড় নিয়ে যাওয়ার তীব্র নিন্দা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার। এছাড়া পুলিশর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যেকোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো বাধা নেই। তাহলে একজন মুক্তিযোদ্ধার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করার চেষ্ট করছে কেন? কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে বঙ্গবীরের সঙ্গে যে কেউ আলোচনা করতে পারতেন।’
এসময় শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি থেকে পুলিশ যাদের আটক করে নিয়ে গেছে তাদের দ্রুত মুক্তিরও দাবি জানান ইকবাল সিদ্দিকী।
মন্তব্য চালু নেই