ভূমিহীনদের তালিকা তৈরিতে নতুন অ্যাপ
বাংলাদেশ দারিদ্র-পীড়িত দেশ। অন্ন ও বাসস্থানের খোঁজে প্রতিনিয়তই ছুটে বেড়ায় লাখ লাখ মানুষ। অনেক মানুষের নেই মাথা গোজার ঠাঁই। এরপর বাংলাদেশে নদীর তীর ভাঙন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষ সহায়-সম্বলহীন হচ্ছে দিনের পর দিন।
এসব মানুষের বসবাসের ঠিকানাও থাকছে না। ঠিকানাহীন মানুষ দু’মুঠো অন্নের সন্ধ্যানে শহরমুখী হচ্ছে। কিন্তু শহরে এত মানুষের চাপ সামলানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
তাই সরকার এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে গৃহ ও তৎসংলগ্ন পরিবেশ দেয়ার মাধ্যমে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
বিশেষ করে মানবসম্পদ উন্নয়নে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণসহ আয়বর্ধক কমকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা। যা দেশের দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
গুচ্ছগ্রামে বসতভিটা ও ঘরের মালিকানায় স্বামী-স্ত্রীকে সমান অধিকার দেয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বিধবা-তালাকপ্রাপ্ত-বঞ্চিত-অসহায় নারীর বরাদ্দের ক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার। এতে তারা পাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়াবার ঠিকানা।
সবার জন্য বাসস্থান’ বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গিকার। এই লক্ষকে সামনে রেখে যার সামান্য জমি আছে কিন্তু বসবাসযোগ্য ঘর নেই তার জন্য বিনা মূল্যে গৃহ নির্মাণ, যাদের জমি-ঘর কিছুই নেই তাদের জন্য গুচ্ছ গ্রাম অথবা আশ্রয়ণ প্রকল্প নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এছাড়া ভূমিহীনদের মাঝে ০১ (এক) টাকার বিনিময়ে খাস জমি বন্দোবস্তের কাজ চলমান রয়েছে।
‘সবার জন্য বাসস্থান’ নিশ্চিত করার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরীব-দুখী মানুষের তালিকা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ ধরনের ডাটা স্ট্রাকচার্ড ডাটাবেজে সংরক্ষণ করলে তা বিভিন্ন তথ্য (Information) তৈরি করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা সম্ভব।
তবে এই কাজটিকে আরো সহজ ও গতিশীল করতে একটি ওয়েব অ্যাপলিকেশন তৈরি করেছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ আঃ জলিল। তিনি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা, বিআরডিবি ও একটি বাড়ি একটি খামারের মাঠকর্মি এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মিদের নিয়ে প্রাথমিক ডাটা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করছেন।
তিনি জানান, সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। কারণ এত বিপুল সংখ্যক ডাটা শুধু হাতে লিখে সংরক্ষণ করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালযের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প চলছে বলেও জানান তিনি। চলতি মাসেই এই সফটওয়ার তৈরির কাজ শুরু হয়। এবং এখন সেটা সম্পূর্ণরুপেই কাজ করছে।
আব্দুল জলিল জানান, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে এটি উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে। তারপর তথ্যগুলো জেলা পর্যায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ই চূড়ান্ত করবে যে কারা এবং কখন আশ্রয় পাচ্ছে।
একটি বাড়ির পেছনে আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। ঝিকরগাছার ইউএনও বলেন, আমরা হয়তো খুব ভালো বাড়ি তৈরি করতে পারবোনা। কিন্তু তারা মাথা গোজার ঠাঁই পাবেন।
এইচফোরইওয়ান-হোম ফর এভরিওয়ান ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (H4E1-Home for EveryOne Information Management System) হলো এমন একটি সিস্টেম যেখানে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক গরীব মানুষের ডাটা স্ট্রাকচার্ডভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব। এর ওয়েব ঠিকানাঃ http://uno.upazilapps.com
অসংখ্য সার্স অপশনের মাধ্যমে ডাটা ম্যানুপুলেট করে চাহিদা মাফিক তথ্য (Information) তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আপদকালীন সময়ে ভালনিয়ারেবল গ্রুপ চিহ্নিত করার জন্য এই ডেটা ব্যবহার করা যেতে পারে।
সফটওয়্যার এর বৈশিষ্ট্য:
ক) আবেদনকারীর তথ্য জাতীয় পরিচয়ভিত্তিক হওয়ায় ডুপ্লিকেশন এড়ানো সম্ভব
খ) আবেদনকারীর ছবি, ভোটার আইডির স্ক্যান কপি এবং ঘরের ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
গ) ওয়েব বেজড হওয়ায় ইনস্টল না করে শুধু ব্রাউজার ব্যবহার করে যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবে। যে কোন উপজেলা এই সিস্টেমে একটি একাউন্ট খুলে তা নিজেদের জন্য বিনা খরচে ব্যবহার করতে পারবে।
ঘ) অসংখ্য সার্স অপশন থাকায় নানাবিধ তথ্য (Information) তৈরি করে তা পলিসি লেভেলে ব্যবহার করা যাবে।
এই প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১০ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এর মাধ্যমে ভূমিহীনদের স্থায়ী ঠিকানা করে দেয়া হবে। এ উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ২৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অন্ততপক্ষে দেড় হাজার ভূমিহীনকে পুনর্বাসন করার কথা বলা হয়েছে।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় এ কাজ শেষ করা হবে। কোন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই সিস্টেম বিনামূল্যে তার উপজেলায় ব্যবহার করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায় মোবাইল: +88 01713 900 775
মন্তব্য চালু নেই