ভূমিকম্প : প্রস্তুত আছে কি বাংলাদেশ? অথবা আপনি, আমি, আমরা?

নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৬ হাজার ৬২১ জনের প্রাণহানী হয়েছে, ভেঙে গেছে অনেক ভবন আর পূরাকীর্তি। অবস্থান বিচারে বাংলাদেশে এরকম ভূমিকম্প যেকোনো সময়েই ঘটতে পারে। কোটি কোটি বছর আগে ভারতীয় প্লেট এসে আঘাত হেনেছিলো ইউরেশীয় প্লেটে, সেই সংঘর্ষে তৈরী হয়েছে হিমালয় পর্বতমালা, কিন্তু সেই দুই প্লেটের সংযোগস্থলটি ঠিক নেপাল, ভুটান, সিকিম, তিব্বতের মধ্য দিয়েই গেছে। ফলে এসব এলাকায় বাংলাদেশের খুব কাছেই ভূমিকম্প নিয়মিত ব্যাপার।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে খোদ বাংলাদেশের মানচিত্রই পাল্টে গেছিলো, এর আগে ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে প্রবল পরাক্রান্ত ব্রহ্মপূত্র নদীর মূল ধারা সরে গিয়ে তখনকার ছোট্ট নদী যমুনাকে করে তুলেছিলো এতো বিশাল বড় নদী। সেইসব ভূমিকম্পে প্রাণহানী হয়েছিলো কম, কারণ এখনকার মতো নড়বড়ে ইট কাঠের শহরের ঘনবসতি সেসময়ে ছিলো না। (ইতিহাসের রেকর্ড ঘেঁটে দেখলাম গত ৫০০ বছরে এই এলাকায় অন্তত ১২০টির বেশি ভূমিকম্প হয়েছে)।

কিন্তু এখন?
এখন একটা ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার না, বাংলাদেশে মারা যাবে লাখ লাখ মানুষ। আমরা এখন দুইটা রেকর্ডের অধিকারী — সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘুর্ণিঝড় বা সাইক্লোন (১৯৭০), এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী টর্নেডো (দৌলতপুর-সাটুরিয়া টর্নেডো, ১৯৮৯ সাল)। সচেতন না হলে ভূমিকম্পের রেকর্ডটাও হয়তো আমরা পেয়ে যাবো।

কীভাবে প্রস্তুত হতে পারা যায়?
১) সচেতনতা — ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, অধিকাংশ মানুষই জানে না। অথচ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশে নিয়মিতভাবে স্কুলে বা অফিসে ভূমিকম্পের ড্রিল হয়, কী করতে হবে তার জন্য। বাংলাদেশে সেটার চল কবে হবে তার অপেক্ষায় বসে না থেকে আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসেন, ঠিক করে ফেলেন ভূমিকম্প হলে কে কী করবেন, সেটা।

২) ভূমিকম্পের পরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, সেই সময়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত না হয়ে থেকে কীভাবে পরিবারের সবাই বা বন্ধুরা একে অন্যের খবর পাবেন, বিকল্প ভাবনা ভেবে রাখেন। দরকারি তথ্য, ফোন নম্বর লিখে রাখেন। (ফোনে সেইভ করে রেখে লাভ নাই, কারেন্ট না থাকলে সেই ফোনও চলবেনা)।

৩) বাসার প্রতিটি মানুষের জন্য একটি ইমার্জেন্সি কিট বানিয়ে রাখেন, যাতে থাকবে একটা রেডিও, ব্যাটারি, কিছু শুকনা খাবার, কাপড়, টাকা এসব।

৪) ভূমিকম্প হলে দৌড়ে বেরুবার সময়ে দামি জিনিষপত্র বাঁচাতে গিয়ে অনেকে ঘরে আটকা পড়ে যেতে পারেন। আপনার কোন জিনিষটা প্রাণের মতো প্রিয়, সেটা আগেই ভেবে রাখেন, যাতে সেই একটি জিনিষ দ্রুত সাথে নিয়ে বেরুতে পারেন।

৫) সহজেই ভেঙে পড়তে পারে এমন ভবনের ছবি তুলে ফেইসবুকে দেন, কর্তৃপক্ষকে জানান। আর ভবন নির্মানে দুই নম্বরি করা কন্ট্রাক্টর, ইঞ্জিনিয়ার এদের পরিচয় ফাঁস করে দেন, সামাজিকভাবে এসব চোট্টারা অপদস্থ হোক অন্তত।

৬) রানা প্লাজার ঘটনার সময়ে দেখা গেছিলো, ভবন ভেঙে পড়লে সেখান থেকে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার মতো দক্ষ জনবল বাংলাদেশে নাই। আগামী দুর্ঘটনার জন্য বসে না থেকে আগেই সেটা ভাবেন, মন্ত্রী এমপিদের বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বিরক্ত করে হলেও ভেঙে পড়া ভবন থেকে মানুষ উদ্ধারের মহড়া দিয়ে প্রস্তুত থাকতে বাধ্য করেন।

ভূমিকম্প হলে ঠেকাবার উপায় নাই। একমাত্র উপায় হলো সচেতন থাকা।

নেপালী বন্ধুদের জন্য সমবেদনা রইলো।

[ Ragib Hasan, Assistant Professor, University of Alabama at Birmingham, USA ]



মন্তব্য চালু নেই