ভিসেরা রিপোর্টে আটকে যায় তদন্ত!
হত্যা বা আত্মহত্যার প্ররোচণায় নিহতের ঘটনার মাসের পর মাস পেরিয়ে যায় কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায় না। এর কারণ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তারা ‘ভিসেরা প্রতিবেদনে আটকে আছে’ বলে দাবি করেছেন। তবে রাসায়নিক গবেষণাগার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আটকে থাকার প্রশ্নেই আসে না। আর ভিসেরা তদন্ত প্রতিবেদনের অনেকগুলো ধাপ আছে।’ তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন মাসের পর মাস কেন আটকে থাকে?খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
রাসায়নিক গবেষণাগারের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী ভিসেরা প্রতিবেদন দ্রুত বা ধীরে হওয়ার নজির আছে। যদিও ঠিক কতগুলো মামলার পরীক্ষা চলছে বা হয়েছে তার কোনও প্রতিবেদন তাদের কাছে নেই। তারা সিআইডি সদর দফতর দেখিয়ে দিলেও সেখানে গিয়ে জানা যায়, এসব তথ্য বিশেষ কারণেই দেওয়া সম্ভব না।
বৃহস্পতিবার রাসায়নিক পরীক্ষাগারে গিয়ে দেখা যায়, ফাইলের পর ফাইল সই করে চলেছেন প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দিলীপ কুমার সাহা। গত একবছরে কতগুলো ভিসেরা পরীক্ষার জন্য এসেছে, কতগুলো সম্পন্ন করা গেছে-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এসব তথ্যাদি দেওয়া নিষেধ আছে। তবে আমরা দ্রুতই সম্পন্ন করি। যৌক্তিক সময়ের বাইরে সময় লেগেছে এমনটা হয়নি।’
সময় লাগার কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিডনি, পাকস্থলী, ফুসফুসের আলামত পরীক্ষা করে থাকি। কোনও ধরনের বিষক্রিয়া হয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য। এতে খুব বেশি সময় লাগার কারণ নেই।’
ঠিক কয় মাস লাগতে পারে প্রশ্নে- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘সাত দিনের বেশি সময় লাগার কারণ নেই। শরীরের অর্গানগুলোকে ভিসেরা বলা হয়। তার কেমিক্যাল অ্যানালাইসিসসহ মাইক্রোবায়োলজিক্যাল নানা পরীক্ষাতে যে অর্গানের আলামত পাঠানো হয় সেগুলোকে ভিসেরা বলে। এই পরীক্ষাগুলোর রেজাল্ট আসার পর আমরা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাসায়নিক পরীক্ষাগারে সারাদেশ থেকে ভিসেরা একজায়গায় আসে। তারা দেখে যিনি নিহত হয়েছেন তার শরীরে বিষক্রিয়ার লক্ষণ আছে কিনা বা কোনও ধরনের মাদকের অস্তিত্ব আছে কিনা। এটা করতে একেবারেই বেশি সময় লাগার কথা না। তবে আমরা যতটুকু জানি তাদের মামলার সংখ্যার তুলনায় লোকবল সামান্য। সারাদেশের পরীক্ষা একজনে করতে গিয়ে সময় বেশি লেগে যায় অনেক সময়।’
যদিও লোকবলের সংকটের কথা স্বীকার করতে চান না অপরাধ তদন্ত বিভাগ। দেরি হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ হেল বাকী বলেন, ‘আমরা কোনও কিছু ফেলে রাখি না। ওখানে (পরীক্ষাগারে) গিয়ে কী হয় তা বলতে পারছি না।’
গবেষণাগারে পরীক্ষকের অভাব আছে কিনা প্রশ্ন তিনি বলেন, আমাদের যথেষ্ট জনবল আছে, কোন সঙ্কট নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আকতার জাহান নিহতের ঘটনা, মিরপুর সাইক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আফসানা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে প্রতিটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত অগ্রগতি জানতে চাইলে তারা ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন না আসায় আটকে আছে বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাসায়নিক গবেষণাগারের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিসেরা প্রতিবেদনে তদন্ত আটকে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বা অন্য কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার হয়েছে কিনা ভিসেরা প্রতিবেদনে সেটা স্পষ্ট হওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কেবল হত্যা মামলাগুলোর আলামত আসে তাই তো নয়, অন্যান্য অনেক ধরনের আলামত পরীক্ষাও করা হয়। ফলে দেরি হয়। মামলার তদন্তের আরও অন্যান্য কাজ থাকে সেগুলো সম্পাদন না করে আমাদের দোষ দিলে তো চলবে না।’
মন্তব্য চালু নেই