ভিনগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগে আমরা কি প্রস্তুত?

গেলো সপ্তাহে হলিউডে মুক্তি পেয়েছে সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র এরাইভাল। চলচ্চিত্রের কাহিনী গড়ে উঠেছে ভিনদেশীদের আগমন আর যোগাযোগকে কেন্দ্র করে। ছবিতে দেখানো হয়, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীরা অবশেষে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এই আনন্দে যখন উৎফুল্ল সবাই, ঠিক তখন তাদের আগমনের উদ্দেশ্য আবিষ্কার হয়। ফলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাদ দিয়ে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয় পৃথিবী।

ছবির কল্পকাহিনী যাই হোক, এরাইভাল ছবিটি দেখে অনেকের মনেই আবারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ভীনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কি ঠিক হবে? এর আগে পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং একাধিকবার সাবধান করে বলেছেন, মহাকাশে থাকা বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে আমাদের দেখা না হওয়াটাই মঙ্গলজনক।

কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, অতিমাত্রার বুদ্ধিমান প্রাণীরা তাদের উন্নত প্রযুক্তির কথা আমাদেরকে জানিয়ে দেবে এমনটা ভাবা একদম ঠিক নয়। তাহলে আর তারা বুদ্ধিমান হল কি করে! বরং তাদের চেষ্টা থাকবে কি করে এই পৃথিবী অথবা আমাদের ব্যবহার করে নিজেদের আরও উন্নত করা যায়।

সহজ কথায় অনেকটা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মতো! তার আবিষ্কারের পর এই মহাদেশ দুটির কি অবস্থা দাঁড়ায় তা সবারই জানা। অথবা শ্বেতাঙ্গদের আফ্রিকা মহাদেশ আবিষ্কারের কথাই ধরা যায়। অনুন্নত আফ্রিকান জাতিকে বুদ্ধিমান শ্বেতাঙ্গরা একসময় গলায় দড়ি পড়িয়ে তাদের ক্রীতদাস হিসেবে আমেরিকায় নিয়ে আসে।

এই অবস্থা যদি মানব জাতির মাঝেই হয়ে থাকে, তবে অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা কেন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে তাদের উন্নত প্রযুক্তি আমাদের হাতে তুলে দেবে? অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, উল্টোটাও তো হতে পারে! অর্থাৎ বুদ্ধিমান প্রাণীরা আমাদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়ালেও বাড়াতে পারে!

তবে যাই হোক, কারও কারও মতে এলিয়েনের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার আগে আমরা সেই মুহুর্তের জন্য কতটুকু প্রস্তুত তা ভাবতে হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার এসইটিআই (Search for extraterrestrial intelligence) ইনস্টিটিউট ইন মাউন্টেন ভিউ প্রকল্পের প্রধান নভোচারী সেথ সোস্টাক বলেন, আমাদের দুটি সম্ভাবনা মাথায় রাখতে হবে। সে জন্যে প্রস্তুতিও নিতে হবে।

তিনি যখন আইএএ (International Academy of Astronautics)তে ছিলেন তখনই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এজন্যে একটি প্রটোকল তৈরিরও পরামর্শ দেন। যারা এলিয়েন আসার সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করবে। তবে তাদের মূল কাজ হবে রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশের এলিয়েন সম্পর্কে ধারণা নেয়া।

অবশ্য ১৯৮০ সালেই বিজ্ঞানীরা গোপনে হলেও কার্যক্রম শুরু করে। ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা সম্পর্কে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য বিনিময় করে। তবে সেথ সোস্টাকের মতে এই প্রটোকল শুধু উন্নত দেশগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। পুরো বিশ্বেই তা ছড়িয়ে দিতে হবে।

একই সঙ্গে তার মতামত, যদি সত্যিই মহাকাশের কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সংকেত আমাদের রেডিও টেলিস্কোপে ধরা পড়ে কিংবা যোগাযোগের চেষ্টা করে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা না করে তার উত্তর দেয়া একেবারেই ঠিক হবে না।

তথ্যসুত্র : লাইভ সায়েন্স, স্পেস



মন্তব্য চালু নেই