ভালোলাগার মানুষের সঙ্গে যা করতো ঐশী

ঐশীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে। সেখানকার ধর্মীয় রীতিনীতি ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তার ভাল লাগেনি। ছেলেদের টুপি ও মেয়েদের স্কার্ফ পরা অসহ্য মনে হয়েছে তার কাছে। তখন থেকেই তার ধারণা জন্মে- ওই স্কুলে পড়াশোনা করলে পার্থিব জীবনের সকল সৌন্দর্য উপভোগের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। অদেখাই রয়ে যাবে সৃষ্টির আসল সৌন্দর্য। এ ধারণা থেকে স্কুল বদল করতে বাবা-মাকে চাপ দিতে থাকে। বায়না ধরে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- অক্সফোর্ড স্কুলে ভর্তির।
ঐশী ছিল বাবা-মায়ের বড় মেয়ে। তাই তার সকল আবদার পূরণের চেষ্টা করতেন বাবা-মা। যা চাইতেন তা-ই দেয়ার চেষ্টা করতেন। এরই এক পর্যায়ে ২০১১ সালে ঐশীকে ধানমন্ডির অক্সফোর্ড স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা-মা। ভর্তির পর স্কুলের গাড়িতেই যাতায়াত করতো ঐশী। মাঝে-মধ্যে রিকশা নিয়ে যেতো। পারিবারিক সূত্র জানায়, অক্সফোর্ড স্কুলে ভর্তির পরই ঐশীর আচরণ ও জীবন-যাপনে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
সালোয়ার কামিজ ও স্কার্ফ ছেড়ে পাশ্চাত্য ঢঙের পোশাক পরা শুরু করে। খোলামেলা পোশাকে ছেলে বন্ধু ও প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। এ কারণে কখনও কখনও তার মা বকা-ঝকা করতেন। স্কুলের কথা বলে সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে কখনও রাত ১০টা, কখনও ১১টায় ফিরতো। স্কুল ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দিতো ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে। যোগ দিতো ইয়াবা ও গাঁজার আসরে। যেতো ডিজে ও ড্যান্স পার্টিতে। শুধু তাই নয়, পার্টিতে অংশ নেয়া বন্ধু মহলের যাকে ভাল লাগতো, তার সঙ্গেই অন্তরঙ্গ সময় কাটাতো।
এসব পার্টি ও আড্ডার আসরেই পরিচয় হয় পুরান ঢাকার ডিজে জনির সঙ্গে। তার সঙ্গে কিছুদিন মেলামেশার পর তারই বন্ধু রনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। এই রনি ও জনির মাধ্যমেই মূলত নেশার জগতে প্রবেশ করে ঐশী। মাদক গ্রহণের পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ঐশীর ডজনখানেক বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতো। এর বাইরে তার আরও একজন প্রেমিক আছে। তার নাম পারভেজ।
গত ৩১শে জুলাই তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় মা। তারপর থেকে বন্ধু মহলের সঙ্গে যোগাযোগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তখন তার কাছে নিজের পিতা-মাতাকেই প্রধান শত্রু বলে মনে হয়েছে। কখনও নিজেকে শেষ করা আবার কখনও পিতা-মাতাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিকৃত যৌনাচার ও মাদক সেবনে অভ্যস্ত হওয়ায় ঐশী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছিল। ফলে পিতা-মাতার মতো সবচেয়ে কাছের মানুষজনকে এত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে পেরেছে।
ফাঁসির রায় শুনার পর যা করলেন ঐশী !
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যা করার দায়ে এই দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঐশী আগেই জানতেন যে আজ এই হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে। তবে সেই রায় যে ফাঁসির আদেশ হবে সেটা ভাবেননি। আদালতে আসার সময় মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে এলেও বেশ স্বাভাবিকই ছিলেন। তখন তাকে বিচলিত দেখায়নি। তবে ফাঁসির শুনার পর নিজেকে আর সামলাতে পারেননি।
ফাঁসির রায় শোনার পর আর কান্না ধরে রাখতে পারলেন না ঐশী। রায় পড়া শেষ হতে না-হতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন ঐশী। এ সময় তাঁর পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্যরা তাঁর চোখ মুছে দেন।
পরে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন ঐশী। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করবেন বলে আইনজীবীদের জানিয়েছেন তিনি।
ঐশীর আইনজীবী মাহবুবুর রহমান রানা বলেন, ‘রায় ঘোষণার পর জানতে চাইলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ঐশীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টার দিকে ঐশীকে আদালতে নেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ রায় পড়া শুরু করেন।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আবুল খায়ের।
পরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম সাজেদুর রহমান তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী। (সংগৃহীত)
মন্তব্য চালু নেই