ভালোবাসা চিরন্তন

ভালোবাসা চিরন্তন, ভালোবাসার নেই কোনো সীমানা, স্থান, কাল বা পাত্র ভেদাভেদ। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিন শুধুই ভালোবাসাবাসির জন্য।

অনেকে ভাবেন, এই দিনটি বুঝি শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার বিশেষ ভালোবাসাতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে ভালোবাসা দিবসে সবার সঙ্গে সবার হৃদ্যতাই কাম্য। ভালোবাসা হতে পারে মা-বাবার প্রতি, স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি। হতে পারে ভাই-বোনের প্রতি, কিংবা বন্ধু বা অন্য কোনো পরিজনের প্রতিও।

তবে রোমান্টিক জুটিদেরই এ দিনে বেশি দেখা যায়। মুখে হাসি নিয়ে, চোখে ভালোলাগার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে পরস্পরের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় তারা। হাতে অথবা খোঁপায় থাকে টকটকে লাল গোলাপ। আবার অনেকে এ দিনটির জন্য বসে থাকেন মনের মানুষকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেবেন বা পাবেন বলে।

আমাদের দেশে এই দিনটিতে রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, একুশে বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুডের দোকান, রাস্তা বা পার্ক সবখানেই মানুষের ঢল দেখা যায়। এ দিনের প্রতিটি প্রেমময় ক্ষণ অন্য রকম বিমূর্ততায় ভরে থাকে। একজন প্রেমিকের কাছে আকাশটা আরো বিশাল, সাগরটা আরো গভীর মনে হয়। অনেকেই প্রিয়জনের জন্য একটু সময়, কিছু উপহার আর হাসি হাসি মুখ করে ভালোবাসার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাতে চান এ দিনে।

তবে, এই দিনটিও এমনি এমনি আসেনি। এদিনের পেছনের ইতিহাস নিয়ে নানা রকম ব্যাখা আছে। তবে সেববের একটির সঙ্গে অপরটির বেশ পার্থক্য দেখা যায়। সেসব বিতর্কে না গিয়ে দেখা যাক উইকিপিডিয়াতে কি আছে। উইকিপিডিয়া বলছে, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনস নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।

বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনসের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইনসের স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স দিবস ঘোষণা করেন।

১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও এক সময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা থেকে বিরত থাকার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।

তবে বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে ব্যায় হয়। এ দিবসে আনুমানিক প্রায় আড়াই কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

আমাদের দেশেও দিনটিতে প্রিয়জনকে ফুল, কার্ড, মগ, চকলেট বা অন্য পছন্দের সামগ্রী দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অনেকে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরাও ভাল ব্যবসা করেন। সেই হিসেবে বলা চলে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র প্রসারতা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরাই। মানুষের ভেতরের প্রেমকে উসকে দিয়ে তারা নিজেদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করেন।

তবে যে যাই বলুক, সবসময় ভালোবাসার জয় হয় হোক। বিশ্বের সবার মধ্যে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হোক। হাতে অস্ত্র, পেট্রোল বোমা বা ককটেল নয়, থাকুক সুরভিত ফুল।



মন্তব্য চালু নেই