ভারতের রমরমিয়ে চলা এই ২৭টি ওষুধ খেলে মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা

অভিযান শুরু হয়েছিল গত মার্চ মাস থেকেই। পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের মোট সাতটি রাজ্যের ড্রাগ রেগুলেটররা চিহ্নিত করতে চাইছিলেন সেই সমস্ত ওষুধগুলিকে যেগুলির গুণগত মান ঠিকঠাক নয়। শুরু হয়েছিল বাজারে চালু বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের ১৮টি জনপ্রিয় ওষুধ নির্মাতার তৈরি করা মোট ২৭টি ওষুধ নিম্ন গুণগত মান নিয়ে বাজারে চলছে।

অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাবোট ইন্ডিয়া, জিএসকে ইন্ডিয়া, সান ফার্মা, সিপলা, গ্লেনমার্ক ফার্মার মতো নামজাদা ওষুধ নির্মাতা। জানানো হয়েছে, লোক-ঠকানো লেবেল ব্যবহার করা, উপযুক্ত পরিমাণ উপাদান ব্যবহার না করা, কৃত্রিম রং ব্যবহার করা, অসময়ে ওষুধে ময়েশ্চার তৈরি হয়ে যাওয়া, ডেজোলিউশন টেস্ট এবং জিসইন্টিগ্রেশন টেস্ট পাশ করতে না পারা ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে এই সমস্ত ওষুধের বিরুদ্ধে।

পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গোয়া, গুজরাট, কেরালা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ— এই সাতটি রাজ্যের বাজার থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে চালানো হয়েছিল পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে সমস্ত ওষুধে সমস্যা রয়েছে, সেগুলি সেবন করলে রোগ তো সারবেই না, উল্টে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। যদি ওষুধ তৈরির উপাদানগুলি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি হয়, তাহলে পেটের গোলমাল, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, কিংবা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমস্যা কোনও কোনও ক্ষেত্রে গুরুতর আকারও ধারণ করতে পারে। কৃত্রিম রং-এর ব্যবহারও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আর ওষুধের পাতা বা কৌটোতে বিভ্রান্তিকর লেবেল ব্যবহার করা ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা শুধু নয়, রোগীর পক্ষে বিপজ্জনকও। এক্সপায়ার করে যাওয়া ওষুধ লেবেল বদলে নিয়ে পুনরায় বাজারে বিক্রি করা হলে মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়।

যে সমস্ত ওষুধের ব্যবহারে বিপদের আশঙ্কা, সেগুলির মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু বহুল ব্যবহৃত ওষুধও। সেগুলির নাম এখানে তুলে দেওয়া হল।

ওষুধের নামের পাশে বন্ধনীতে দেওয়া হল নির্মাতাদের নামও—
১. অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ স্টেমাটিল (অ্যাবট ইন্ডিয়া)
২. অ্যান্টিবায়োটিক পেনটিডস (অ্যাবট ইন্ডিয়া)
৩. অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ওষুধ অ্যালথ্রোসিন (অ্যালেমবিক ফার্মা)
৪. মাইগ্রেনের ওষুধ ভ্যাসোগ্রেইন (ক্যাডিলা ফার্মা)
৫. কফ সিরাপ অ্যাসোক্রিল (গ্লেনমার্ক ফার্মা)
৬. কৃমির ওষুধ জেনটেল (জিএসকে ইন্ডিয়া)
৭. আর্থারাইটিসের ওষুধ হাইড্রোজাইক্লোরোকুইন(এইচসিকিউএস) (ইপস্কা ল্যাবস)
৮. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি মায়োরিল (স্যানোফি সিন্থেল্যাবো)
৯. হাইপারটেনশনের ওষুধ ডিলজেম (টোরেন্ট ফার্মা)
১০. অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ ক্যালভিয়াম বিড (অ্যালকেম)
১১. ফুসফুসের ইনফেকশনের ওষুধ ফিনিক্স (জিএসকে)
১২. হাই ব্লাড প্রেসারের ওষুধ অ্যামোলমেড (ক্যাডলিয়া)
১৩. হাঁপানির ওষুধ ডেরিজোন (জাইডাস হেলথকেয়ার)
১৪. গর্ভপাতের জন্য ব্যবহৃত মিফেজেস্ট কিট (জাইডাস হেলথকেয়ার)
১৫. ফাইভ-ইন-ওয়ান পিল পলিক্যাপ (ক্যাডলিয়া ফার্মা)
১৬. অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ফিক্সোব্যাক্ট (সিপলা)
১৭. কিডনি ও গেঁটেবাতের ওষুধ সিপ্লোরিক (সিপলা)
১৮. পেটের গোলমালের ওষুধ ওমেসিপ ডি (সিপলা)
১৯. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ডিলভাস (সিপলা)
২০. অ্যান্টিবায়োটিক রিফামপিন (এমিকিওর ফার্মা)
২১. গ্যাস্ট্রাইটিসের ওষুধ র‌্যাবলেট (হেটেরো ল্যাবস)
২২. মাথা ব্যথার ওষুধ প্লাভাস (হেটেরো ল্যাবস)
২৩. আয়রন ট্যাবলেট ফার্নিকা (সান ফার্মা)
২৪. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এনপ্রিল (ওখার্ড ফার্মা)

সংবাদমাধ্যমের তরফে সংশ্লিষ্ট ওষুধ নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, দু’টি কোম্পানি তাদের অভিযুক্ত ওষুধগুলো ইতিমধ্যেই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি কোম্পানিরা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এমতাবস্থায় প্রশাসনের তরফে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটাই দেখার।



মন্তব্য চালু নেই