ভারতেও একুশের নানা আয়োজন
একসঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়েছে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল। অনেকের হাতে মোমবাতি। একুশের আগের বিকাল থেকেই ভাষা শহিদদের প্রথমবারের মত স্মরণ করল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর মানুষ। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
এত বছর ধরে বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারি ব্যাপকভাবে উদযাপিত হতো। আর একুশের সকালে ভারতের পক্ষ থেকে ভাষা দিবস পালন করা হতো পেট্রাপোল সীমান্তে। বাংলাদেশ একুশের দিনে অনুষ্ঠান করতো বেনাপোল সীমান্তে। অল্প সময়ের জন্য দু’দেশের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডস্’ খুলে দেওয়া হতো। সেখানে জড়ো হতেন দু’দেশের মানুষ।
কিন্তু এবারের চিত্রটা অন্যরকম। এই প্রথম, একুশের আগের বিকেল থেকেই ভাষা দিবস উদযাপন শুরু করলেন ভারতীয়রা। মোমবাতি মিছিল, ভাষা শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সোমবার দুপুর থেকেই বনগাঁর ত্রিকোণ পার্কের নীলদর্পণ প্রেক্ষাগৃহের সামনে জমায়েত হতে শুরু করেন অগুনতি সাধারণ মানুষ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শ্যামলেন্দু চৌধুরী, নৃত্যশিল্পী ঝর্না ভট্টাচার্য, সঙ্গীতশিল্পী পুষ্পিতা শীলসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেলে তাদের হাতে হাতে তুলে দেওয়া হয় মোমবাতি। শুরু হয় মিছিল। মুখে ভাষা দিবসের গান।
ইছামতীর উপরে রাখালদাস সেতু পেরিয়ে মিছিল পৌঁছে যায় যশোর রোড এবং মিলিটারি রোডের সংযোগস্থলে। তখন সন্ধ্যা নামছে। সেখানে পৌঁছে বনগাঁ পুরসভার পক্ষ তৈরি করা স্থায়ী ভাষা শহিদ বেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেন কেউ কেউ। অনেকে ফুল দেন। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।
শহিদ বেদির একপাশে তৈরি হয়েছে অনুষ্ঠান মঞ্চ। সেখানে ভাষা শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠান চলে বেশি রাত পর্যন্ত।
বনগাঁর অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রকাশিত হয়, ভারত-বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের লেখা পত্রিকা ‘মুখ’। পত্রিকার সম্পাদক পার্থসারথি দে ও দীপঙ্কর দাস জানান, প্রতি বছর তাদের একুশে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় নির্দিষ্ট বিষয় থাকে। এবারের বিষয়, ‘দুই বাংলার ভূত।’
ওই মঞ্চে ছিলেন বাংলাদেশের নাট্য গবেষক তথা অধ্যাপক বিপ্লব বালা।
তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমি একুশের আগের রাতে ঢাকায় থাকি। এই প্রথম ঢাকার ধাঁচে একুশের আগের রাতে ভারতেও অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাই আমন্ত্রণ পেয়ে চলে এসেছি। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না, বাংলা ভাষাকে নিয়ে এ পার বাংলারও এত আবেগ রয়েছে।’’
সঙ্গীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘যে ভাষায় কথা বলি, যে ভাষায় গান গাই, সেই ভাষাকে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’
একুশের আগের রাতের মতোই জমকালো অনুষ্ঠান রয়েছে আজ (মঙ্গলবার)। বনগাঁ পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একুশের সকালে সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ এই প্রথম দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠান হবে।
সেখানে উপস্থিত থাকবেন দু’দেশের শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা।
বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য জানান, এই প্রথম বাংলাদেশের বেনাপোল এবং ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে ভাষা দিবস উপলক্ষে রক্তদান শিবির হবে। ভারত থেকে সংগৃহীত রক্ত যাবে বাংলাদেশের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে এবং বাংলাদেশের রক্ত আসবে ভারতে।
শঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘বনগাঁর মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, বাংলাদেশের ধাঁচে একুশের আগের বিকাল থেকে অনুষ্ঠান শুরু করা। সেই দাবিকেই সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ।’’
মন্তব্য চালু নেই