‘বড় বাজেটে সার্থকতা নেই’
দ্রব্যমূল্য হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি মেটানো এবং মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদের দ্বিতীয় অর্থবছর। শিক্ষা, কৃষি ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়ের যোগ-বিয়োগ করে নামমাত্র বড় বাজেট প্রণয়নের মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। তাদের মতে, ঘোষিত বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন করা ও সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হলেই সার্থকতা আসবে। একইসঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, ক্রমেই জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এ জন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা প্রয়োজন। রাজস্ব আয়ের উৎসগুলো যথাযথভাবে নির্ধারন করে বেশি করে আয়ের উৎস তৈরি করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন প্রবীন এই অর্থনীতিবিদ।
এদিকে এবার বাজেটের আকার প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা নিলেও বাস্তবে ভর্তুকি বাড়বে বলে কেউ কেউ মনে করেন। সরকার কর অবকাশ সুবিধা বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিলেও দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা এর পক্ষে মত দিয়ে আসছেন।
শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘উচ্চাভিলাষী শব্দটি আমি পছন্দ করি। এটা শুনতেও আমি অভ্যস্ত। ২৭ বছর আগে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তখন ছিল ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আমি ছয় বছরে বাড়িয়েছি ৩ শতাংশ। ৯২ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন বাজেট হচ্ছে তিন লাখ কোটি টাকা। আমার টার্গেট সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া। আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি এ বছর হবে।’
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে একটি বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন করা সরকারের দায়িত্ব। বাজেটের আর্থিক কাঠামো (আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলিত হিসাব) বিশ্বাসযোগ্য নয়। সরকার জানে, রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা অর্জন হবে না, সে হিসাবে খরচও হবে না। তাই বাজেট প্রণয়নে বিদ্যমান নীতি পরিবর্তন করতে হবে। অর্থনীতির বাস্তবতার আলোকে বাজেট করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ আরো বাস্তবমুখী হওয়া দরকার। তবে বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, উন্নয়ন প্রশাসনে দক্ষতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।
ধনী-গরীব বৈষম্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে বাজেটে কর্মপরিকল্পনা থাকা উচিত। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমও ঢাকাকেন্দ্রিক। স্থানীয় উন্নয়ন কম। এর মানে হচ্ছে, জাতীয় বাজেটের বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
বাস্তবায়ন হয় না- এমন প্রকল্প তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলে তা যদি লুটপাট ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রভাবশালী গোষ্ঠী আত্মসাৎ করে তবে জনসাধারণের কোনো উপকার হবে না। বাজেট বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার বলে মনে করেন দেশের এই প্রবীন অর্থনীতিবিদরা।
মন্তব্য চালু নেই