বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আশ্বঙ্কা

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কারিগরি সমস্যার কারণে গত ৫ মাস ধরে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে করে মজুদ কয়লার পরিমাণ কমে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী ২৫০ মে. ওয়ার্ড কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সংকটের আশঙ্কা দিয়েছে।
খনি সূত্রে জানা গেছে, কয়লা উত্তোলনের সময় ১২০৫ কোল ফেসে পানি অস্বাভাবিক ভাবে পানি প্রবাহগ বেড়ে যাওয়ায় চলতি সনের গত ১০ মে হতে খনি থেকে পুরোপুরি কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। যা এখন পর্যন্ত উত্তোলন শুরু করতে পারেনি খনি কর্তৃপক্ষ। কবে নাগাদ উত্তোলন শুরু হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।
খনির মাইনিং বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত ১০ মে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সময় হঠাৎ করে পানি ফ্লো দেখা দেয়। পরে বিশেষজ্ঞরা ভূগর্ভের নিচে পানির ফ্লো বন্ধ করে ঐ ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। সে সময় থেকে খনিতে কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিনেই ১৮০০ থেকে ২ হাজার মে. টন প্রয়োজন। বর্তমানে খনিতে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে তা আগামী ২ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু না হলে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ইট-ভাটা মালিকেরাও হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, ভারত থেকে আমদানীকৃত কয়লায় পাথর ও সালফারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা ইট-ভাটার জন্য অলাভজনক ও ক্ষতি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে তারা বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা সংগ্রহ করে ইট ভাটায় ব্যবহার করে। কিন্তু সেই খনিতেই কয়লা সংকট দেখা দেয়ায় তারাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের একটি প্রতিনিধি দল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকা পরিদর্শন করেছে। তারা বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বলছেন ইতিপূর্বে ৫০ হাজার টন ভারতীয় কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমদানী করে ব্যবহার করায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যত্রাংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে তারা ভারত থেকে কয়লা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে লংওয়াল মাল্টিস্লাইস পদ্ধতিতে কোল ফেসের এক দিকে ৩ মিটার পুরো কয়লার স্তর কেটে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। এর পর ২০১৩ সালের মে মাসের গোড়ার দিক থেকে সর্বাধুনিক আন্ডার গ্রাউন্ড টপ কোল কেভিং পদ্ধতিতে কোল ফেইসের উপর নিচ উভয় দিকে একই সাথে ৬ মিটার পুরো কয়লার স্তর কেটে সর্বোচ্চ মাত্রায় কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। এর ফলে খনিতে প্রতিদিন ৫ হাজার মে. টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছিল। চলতি সনের শেষের দিকে ১২০৫ নং ফেইজে পরিক্ষা মুলক ভাবে, কয়লা উত্তোলন শুরু হয় । এর কয়েক দিনের মাথায় কোল ফেইজে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ মে থেকে খনিটিতে কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কয়লা উত্তোলন শুরু করতে পারে নেই খনি কর্তৃপক্ষ। ফলে বর্তমানে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেন্দ্রে কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে। যদি সময় মত কয়লা উত্তোলন শুরু না হয়, তাহলে বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আশ্বঙ্কা রয়েছে এত করে বিদুৎহীন হয়ে পড়বে সারা উত্তারঞ্চল, বিপাকে পড়বে বোরো চাষ।



মন্তব্য চালু নেই