ব্যবহৃত অস্ত্র ঘিরে রহস্য, দুই ‘সন্দেহভাজন’ লাপাত্তা

গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র নিয়ে রহস্যের কিনারা হয়নি। এ ধরনের অস্ত্রের জোগান কিভাবে মিলেছে, হোটেল আর্টিজানে অস্ত্রগুলো পৌঁছেছে কিভাবে, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বেশির ভাগ বিদেশিকে কেন হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অন্যদিকে ঘটনা-পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দারা সন্দেহভাজন হিসেবে যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন তাঁদের মধ্যে দুজনের সর্বশেষ অবস্থান জানা যাচ্ছে না। পরিবারের দাবি, হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান নামের দুজন গোয়েন্দা হেফাজতেই আছেন।

অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলাকারী জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। দেশে যা আগে কখনো জঙ্গি সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এসব অস্ত্র সাধারণ সন্ত্রাসীরাও ব্যবহার করে না। সে ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র কিভাবে তাদের হাতে পৌঁছেছে, তা গুরুত্বসহকারে যাচাই করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে তিনটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি নাইন এমএম পিস্তল, ১৩টি ম্যাগাজিন, নাইন এমএম ক্যালিবারের ছয়টি তাজা গুলি, সেভেন পয়েন্ট সিক্সফাইভ ক্যালিবারের ২৮টি গুলি, একে-২২-এর ৩৫টি গুলি, পয়েন্ট টুটু বোরের ৪৪টি গুলি, ৬ পয়েন্ট ১৬ ক্যালিবারের ১২টি গুলি, সেভেন পয়েন্ট সিক্সটু ক্যালিবারের দুটি গুলি, একই ক্যালিবারের ১৯৫টি গুলির খোসা, নাইন এমএম ক্যালিবারের গুলির ১০৫টি খোসা ও ৯টি গ্রেনেড সেফটি পিন, একটি চাপাতি, দুটি ছোরাসহ বিভিন্ন জিনিস। হামলাকারীরা বিভিন্ন সময় বিমানবন্দর ও সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু অস্ত্রগুলো কিভাবে এসেছে, সে ব্যাপারে ধারণা মেলেনি। পলাতক অন্য জঙ্গিদের হেফাজতে এ ধরনের আরো অস্ত্র মজুদ রয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরিকল্পনাকারীসহ দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকজনের তথ্য পেয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। ঘটনাস্থল হলি আর্টিজান থেকে উদ্ধার করা ৩৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁরা নজরদারিতে রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। যাঁদের আচরণ ও গতিবিধি বেশি সন্দেহজনক মনে হয়েছে তাঁদেরই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে দুজনকে গতকাল বিকেলেও হেফাজতে নিয়েছে ডিবি। এদিকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া কথিত জিম্মি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে নিয়ে রহস্য আরো বেড়েছে। তাঁকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীরা দাবি করলেও তিনি বাসায় ফেরেননি বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। আরেক সন্দেহভাজন ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ হাসিব খানকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। তাঁকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, হাসনাত করিম ও তাহমিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছিল তাঁদের প্রত্যেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসনাতের বাবা এম রেজাউল করিম জানান, ডিবি তাঁর ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল বাসায় পৌঁছে দেবে। কিন্তু এখন কোনো খোঁজই পাচ্ছেন না তিনি। তাহমিদ হাসিবের বাবা শাহরিয়ার খান জানান, তাহমিদ এখনো ডিবির কাছে আছে বলে তাঁর বিশ্বাস। গত ১ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রবিউল করিম।

পরদিন যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন। হাসনাতের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জঙ্গিরা : হামলার ঘটনার তদন্তকারী ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিজানে দেশি-বিদেশি লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখার সময় সপিরবারে সেখানে অবস্থানকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জঙ্গিরা।



মন্তব্য চালু নেই