বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন: উন্নত দেশগুলো সুকৌশলে ঋণ দিচ্ছে
‘দূষণকারী দেশ কর্তৃক ক্ষতিপূরণ’ নীতি অবলম্বন করে শিল্পোন্নত দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সুকৌশলে ঋণ দিচ্ছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহঃস্পতিবার সকালে ধানমন্ডির টিআইবির কনফারেন্স রুমে জলবায়ুবিষয়ক আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ-২১ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সম্মেলনটি আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়ী দেশগুলো অঙ্গীকার অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দ দিচ্ছে না। কেউ কেউ অর্থ দেয়ার নাম করে সুকৌশলে তা ঋণ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। এজন্য আসন্ন প্যারিস কপ-২১ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দ দেয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতায় আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে যথাযথ দায়িত্ব নিতে হবে।’
সেই সঙ্গে এ ধরনের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো সর্তক থাকতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কপ-২১ সম্মেলনে আন্তর্জাতিকভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমান কমপক্ষে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা সীমিত রাখার জন্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সক্ষমতা ও দায়িত্বশীলতা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী উন্নত দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ববান হতে হবে।’
সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) ছাড়ের চিত্র তুলে ধরে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘শিল্পোন্নত ৩৪টি দেশ এ তহবিলে ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিলেও ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিশ্রুত তহবিলের মাত্র ৫০ শতাংশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচির বিপরীতে তহবিল বরাদ্দ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু তহবিল ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক সম্পৃক্ততাসহ সুশাসন নিশ্চিত না করার কারণে জিসিএফ ছাড়ের সরাসরি তহবিল প্রাপ্তির তালিকা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এজেন্য খুব দ্রুত সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে উন্নত দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে চাপ প্রয়োগ করছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ‘গত ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্মেলনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’র অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যাপক কার্বন নিঃসরণ এসডিজি অর্জনের অন্যতম বাধা বলে গণ্য হলে শিল্পোন্নত দেশগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাস্তবে শিল্পোন্নত দেশেগুলো নিজের দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে এমন দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আসন্ন প্যারিস কপ সম্মেলনে রামপাল বিষয়টি অবধারিতভাবে আলোচনায় আসবে। সেক্ষেত্রে আমরা আশা করবো, আন্তর্জাতিকভাবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত মূল্যায়ন ও এর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট করে প্যারিস সম্মেলনে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের (সিএফসি) সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ম. জাকির।
অবস্থানপত্রে কপ-২১ প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নে স্বাচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে টিআইবি পক্ষে থেকে ১০টি দাবি তুলে ধরা হয়।
মন্তব্য চালু নেই