বৈশাখে চাঙ্গা অর্থনীতি, ১২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য
এবার পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এর সিংহভাগই পোশাক খাতে। এছাড়া তালিকায় আছে মিষ্টান্ন জাতীয় পণ্য, হস্ত নির্মিত নানা পণ্যসামগ্রী, আসবাবপত্র এবং তৈজসপত্র।
এমনকি ছোটদের মাটির পুতুল, বাঁশের বাঁশি, রঙিন বেলুন, ঢোল, ডুগডুগি, ফিতা, পুঁতির মালা, কাচের চুড়ি, ইমিটেশনের গহনাসহ বিভিন্ন পণ্যের জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে এই দিনকে ঘিরে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সারা বছর তাদের যে ব্যবসা হয়, তার অর্ধেক হয় রমজান ঈদে। আর পয়লা বৈশাখে হয় মোট ব্যবসার ২৫ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশ ব্যবসা হয় সারা বছর।
তবে এবার বৈশাখী পণ্যের যে বেচাকেনা হয়েছে তাতে এখনই ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বেচাবিক্রির এমন অবস্থা থাকলে তা সারাবছরের মোট ব্যবসার ৩৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বিভিন্ন পণ্যের ছোট-বড় প্রায় ২৬ লাখ দোকান রয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে এসব দোকানীরা থাকেন বেচাকেনায় ব্যস্ত। একইসঙ্গে বকেয়া আদায়ে নতুনভাবে হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম মন্টু বলেন: পয়লা বৈশাখে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় দেশীয় তৈরি পোশাক। যেটাকে আমার লোকাল পণ্য বলে থাকি। এ সময়ের মোট বেচাবিক্রির প্রায় অর্ধেকই হয় পোশাক খাতে।
‘এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেচাবিক্রি হয় মিষ্টান্ন ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক পণ্য।’
তিনি বলেন, সারা দেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয় এই সময়ে। মূলত রোজার ঈদের পরই সবচেয়ে বেশি বেচাবিক্রি হয় পয়লা বৈশাখের উৎসবকে ঘিরে।
তবে বেশি লেনদেন হয় বুটিক-ফ্যাশন ও মিষ্টান্নের বাজারে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা বলে তিনি জানান।
রাজধানীসহ দেশে ৫ থেকে ৬ হাজার বুটিক ও ফ্যাশন হাউজ রয়েছে।
ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেইনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফইএবি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ ফ্যাশন হাউজ রয়েছে।
সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশীয় বাজারে ফ্যাশন হাউজগুলোতে তৈরি পোশাক বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেকই অর্থাৎ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছে রমজান ঈদে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৬শ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছে পয়লা বৈশাখে।
এবার বৈশাখে তার চেয়েও বেশি বিক্রি হবে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে এফইএবির সভাপতি আজহারুল হক আজাদ বলেন, বিদেশে রপ্তানি ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে তৈরি পোশাকের মোটামুটি বড় বাজার আছে। বছরের প্রায় অর্ধেকই বিক্রি হয় রমজান ঈদে। তবে এর পরের অবস্থানেই রয়েছে পয়লা বৈশাখের উৎসব।
‘এসময় বৈশাখি শাড়ি-থ্রি-পিস, পায়জামা-পাঞ্জাবি বেশ বিক্রি হয়।’
ফ্যাশন হাউজ রং বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, রমজানের পর এখন বড় আয়োজন হিসেবে পয়লা বৈশাখকে বিবেচনা করে ফ্যাশন হাউজগুলোর উদ্যোক্তারা। কারণ বছরের প্রায় এক চতুর্থাংশই বিক্রি হয় এ উৎসব উপলক্ষে।
পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দেশের ব্যাংকগুলোতেও লেনদেন হয় হাজার হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের সব ব্যাংকে পয়লা বৈশাখের আগে কী পরিমাণ লেনদেন হয় তা আলাদাভাবে হিসাব করা হয় না। তবে বাজারে যে পরিমাণ কেনা-বেচা হয় ঠিক সেই পরিমাণই লেনদেন হয়ে থাকে ব্যাংকগুলোতে।
‘এই লেনদেনের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা হতে পারে।’
মন্তব্য চালু নেই