বেসিক ব্যাংককে নিজের পায়েই দাঁড়াতে হবে

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে কয়েক দফায় ২৩৯০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। তবে এতেও দুর্ভোগ লাঘব না হওয়ায় আবারও ২৬০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর সুযোগ চায় ব্যাংকটি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ প্রস্তাব নাচক করে দিয়েছে। ফলে দুর্দশা কাটাতে নিজের পায়েই দাঁড়াতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে।

জানা গেছে, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪২৪ কোটি টাকা। মূলধন কমে যাওয়ায় পণ্য আমদানিতে সরাসরি এলসি খুলতে পারছে না ব্যাংকটি। ফলে নিতে হচ্ছে অন্য ব্যাংকের সহায়তা। এতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বেসিক ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে বন্ড ইস্যুর আবেদন করা হয়। আবেদনে বেসিক ব্যাংক জানায়, বন্ড হতে পারে ২৬টি এবং প্রতিটি বন্ডের মূল্যমান হতে পারে ১০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, পুরো মূলধন ঘাটতিই বন্ডের মাধ্যমে পূরণ করতে চায় দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকটি।

সূত্র আরও জানায়, বেসিক ব্যাংকের দেয়া এ প্রস্তাব দেখছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রী। বন্ড ইস্যু করা যায় কি না সে বিষয়ে মতামতের জন্য অর্থ বিভাগের বাজেট শাখাকে নির্দেশও দেন তিনি। তবে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী দেয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বন্ড ছাড়ার বিপক্ষে মত দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ বলছে, বেসিক ব্যাংকের নামে বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য।কারণ বন্ড ছাড়তে হলে সরকারকেই মূলধন জোগান দিতে হবে। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়বে।

তাদের মতে, ঘাটতি মেটাতে গত বছর বেসিক ব্যাংককে ১২০০ কোটি টাকা দেয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো লোকসান হয়েছে ২৫৪ কোটি টাকা। কাজেই আবারও বন্ড ইস্যু করা ঠিক হবে না। সুতরাং এখন ব্যাংকটিকে নিজের ক্ষমতায় মূলধন ঘাটতিসহ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির ওপর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।ওই প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে যেহেতু ব্যাংকটি সরকারি, তাই সরকারের উপর মহল থেকে যদি নির্দেশনা আসে তাহলে যেকোনো সময় বন্ড ইস্যুর সুযোগ পাবে ব্যাংকটি।

জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, বন্ড ইস্যুর বিষয়টি এখনো পরীক্ষাধীন।

বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, বন্ড পেলে ব্যাংকটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, প্রথমবার ২০১৪ সালে দুই দফায় ৭৯০ কোটি এবং ৪০০ কোটি টাকা দেয়া হয়। গত বছর দেয়া হয়েছিল আরো ১২০০ কোটি টাকা। তবে সরকার নিযুক্ত এমডি ও পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন জনগণের টাকায় ঘাটতি পূরণ করা হলে তা হবে অনৈতিক।



মন্তব্য চালু নেই