বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে

দেশে দু’দফা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা জানান, তারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। মনের ভেতরে প্রায়ই উঁকি দিচ্ছে, হয়তো তাদের ভেতরেই থাকতে পারেন কেউ, যারা বিপথে পা দিয়েছেন। তাই অনেকে বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে চলার ক্ষেত্রে এবং নতুন করে বন্ধুত্ব হওয়ার ক্ষেত্রে ভয় পাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, সেমিস্টার ড্রপ দেওয়া শিক্ষার্থীরা আছেন বেশি আতঙ্কে। পারিবারিক কারণে বা অসুস্থতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকলেও তাদেরকে এখন পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। হাজারো প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসে তাদেরকে সাধারণ নিয়ম ছাড়াও কিছু বাড়তি নিয়ম কড়াকড়িভাবে পালন করতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মী ও শিক্ষকদের নজরে থাকতে হচ্ছে। কোন কারণে ক্লাসে উপস্থিত না থাকতে পারলে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ক্লাসে জঙ্গি বিরোধী কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত আসেন তা নিশ্চিত করতে তাদের সঙ্গে শিক্ষকরা আলাদাভাবে কথা বলছেন।

ঈদের ছুটির পর গত ১০ জুলাই শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম। ছুটিতে রাজধানীর বাইরে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এখনও ফিরে আসেননি। এই শিক্ষার্থীদের নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে ধুম্রজাল। যারা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন তারা অবিলম্বে তাদেরকে ক্যাম্পাসে আসার তাগিদ দিচ্ছেন।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদ সরকার বলেন, ‘গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর কারণে এখন চাপটা সবাইকে নিতে হচ্ছে। সামাজিকভাবেও এখন আমাদের ছোট করে দেখা হচ্ছে। অনেকে আমাকে বলেন, বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছো, একটু খেয়াল করে থেকো, যেন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে না যাও।` এখন আমার প্রশ্ন হলো, সবাই কি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে? যদি না হয় তাহলে মানুষের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন আসে কেন?’

ইউনিভার্সিটি অব ডিফারেন্ট অল্টারনেটিভ এর চারুকলার শিক্ষার্থী ফাহিমা তানজুম অধরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জীবন অনেকটা মুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি জঙ্গি হামলার ঘটনার কারণে পরিবার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় নজরবন্দি থাকতে হচ্ছে। দেশ ও সমাজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এটা মেনে নেওয়া যায়। তবে কতদিন এমন চলতে খাকবে সেটা নিয়ে ভাবার আছে।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে সেহেতু আরো চিন্তার বিষয় হলো, জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কেউ আমার আশপাশেই আছে কি না? যদি থাকে তাহলে আবশ্যই আমার জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান আহমদ বলেন, ‘আমাদের মতো তরুণরাই গুলশানে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যদি এমন কেউ আমার বন্ধুদের মধ্যে থাকে তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। তাই এখন বন্ধুদের সঙ্গে চলার ক্ষেত্রে বেশ ভাবতে হচ্ছে।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারির জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করছেন। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস- এর শিক্ষার্থী মনি আচার্য বলেন, ‘জঙ্গিদের সঙ্গে শিক্ষকদের জড়ানোর বিষয়টি আমাদের হতাশ করেছে। যে শিক্ষকের কাছে থেকে আমরা নৈতিক শিক্ষা নেব, তিনি যদি মানুষ মারার শিক্ষা দেন তাহলে শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবেন। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদেরই তো অবদান থাকে বেশি।’

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কানন রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষকদের কাছে ভিড়তে ভয় পাবেন। কিছু শিক্ষক নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে মানুষ মারার শিক্ষা দিচ্ছেন। তাদেরকে ‘আইডেন্টিফাই’ করাও তো মুশকিল।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। আশা করছি এসব সমস্যার সমাধান হবে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ, সন্ত্রাসবাদ কারো কাম্য নয়।’



মন্তব্য চালু নেই