বেশি চিনি খেলে নির্ঘাত মৃত্যু, বিকল্প হতে পারে যে খাদ্যগুলো

শরীরকে ভেতর থেকে খারাপ করে দিতে চিনির কোনো বিকল্প নেই। একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে চিনি খেলে ডায়াবেটিস, স্থুলতা, ক্যান্সার এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আর এই সবকটিই যে মারণ রোগ, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। তাই বেশি দিন সুস্থভাবে বাঁচতে চিনি খাওয়া কমাতে হবে, একেবারে বর্জন করে দিলে তো কথাই নেই!

নানাভাবে চিনি আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। খিদে পাওয়ার জন্য যে হরমোনটি দায়ী, তার ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় চিনি। সেই সঙ্গে হজম তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়ে ইনসুলিনের ক্ষরণও বাড়ায়। ফলে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও হাজারো রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে শরীরে। কিন্তু প্রশ্ন হল, চিনি ছাড়া যে অনেক খাবারেই স্বাদ আসে না, তাহলে উপায়?

একাধিক ঘরোয়া উপাদান রয়েছে যা চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সব ঘরোয়া পদ্ধিতগুলি সম্পর্কে, যেগুলি চিনির বিকল্প হিসাবে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।

১. মধু
চিনির বিকল্প হিসাবে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। মিষ্টতার দিক থেকে মধু কোনো অংশেই চিনির থেকে পিছিয়ে নেই। সেই সঙ্গে মধুতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেল, যা শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয় গ্লাইকেমিক ইনডেক্সে চিনির থেকে অনেক নিচে রয়েছে মধু। তাই এটি খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।

২. খেজুর
এই ফলটি পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় আমাদের হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, খেজুরের বিচিটা বার করে নিয়ে তা দিয়ে বানাতে হবে সিরাপটি। খেজুরের এই সিরাপটি চিনির পরিবর্তে যে কোনও খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. নারকেল চিনি
শুনতে একটু আজব লাগলেও নারকেল দিয়েও কিন্তু বিশেষ এক ধরনের চিনি বানানো সম্ভব। এটি বানাতে হবে নারকেলের ভেতরের সাদা রঙের যে আবরণ থাকে তা দিয়ে। প্রথমে সাদা আংশটা নারকেল থেকে ছাড়িয়ে নিন। তারপর সেটি সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে সেটিকে ঠান্ডা করুন। এটি চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করলে স্বাদের ফারাক তো বুঝবেনই না, সেই সঙ্গে শরীরে আয়রণ, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রবেশ করার কারণে নানা ধরনের জটিল রোগও দূরে থাকবে।

৪. মেপলে সিরাপ
মেপলে হল এক ধরনের পাতাবাহার গাছ। এই গাছের রসকে গরম করলে এক সময়ে গিয়ে ঘন একটি তরল পাওয়া যায়। এই তরলটি এতটাই মিষ্টি হয় যে চিনির জায়গা নিতে কোনও সমস্যাই হবে না। তাছাড়া মেপলে রসে আছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই সবকটা উপাদানই শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

৫. গুড়
আখ এবং খেজুরকে পিষে তার রস দিয়ে বানানো গুড়, মিষ্টির দিক থেকে চিনিকেও হার মানাতে পারে। আর সবথেকে মজার কথা হল, এত মিষ্টি থাকার পরেও শরীরের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না এটি। তাই চিনির পরিবর্তে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যেতে পারে গুড়কে। তাছাড়া গুড়ে প্রচুর মাত্রায় খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি নানা রকমের রোগকে শরীর থেকে দূরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. লাল চালের সিরাপ: লাল চালকে পচালে এক ধরনের রস পাওয়া যায়। সেই রসটিকে গরম করলে তা ঘন হয়ে যায়। এই ঘন রসটি চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭. কলা
পরিমাণ মতো কলা নিয়ে মিক্সারে ব্লেন্ড করে নিনি। এই ফলটি মিষ্টি হওয়ার কারণে এর পেস্টটিও খুব মিষ্টি হয়। তাই চিনিকে বিদায় করে দিয়ে এই ঘরোয়া উপাদানটিও ব্যবহার করতে পারেন। তাতে খাবার মিষ্টিও হবে, আবার শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।



মন্তব্য চালু নেই