সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম

বেরোবিতে ভর্তি জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেরোবি) ২০১৪-১৫ (স্নাতক) শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট শাখা।

জালিয়াত সংশ্লিষ্ট ওএমআর শিট বাতিল, জালিয়াতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ফলাফল পুনর্মূল্যায়ণের দাবিতে রবিবার বেলা ১১ টায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক প্রতিবাদী সমাবেশে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ঐ সংগঠনটি।
বেরোবি শাখার ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আহমেদ নাসিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বেরোবি শাখার আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য আসাদুজ্জামান শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক যুগেশ ত্রিপুরা সহ আরও অনেকে।

সমাবেশে বক্তারা ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে নানা অভিযোগ-অনিয়ম-দূর্নীতির কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েও মেধা তালিকায় ১৬১ তম স্থান দখলের মত ঘটনা ঘটেছে।ঐ শিক্ষার্থীর নাম মোস্তাফিজুর রহমান।যার রোল ১৪৬০২০।
এছাড়াও গণিত বিভাগের প্রভাষক ইসমাইল হোসেন নিজ বোনকে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে সংগঠনটি।। নিয়ম অমান্য করে তিনি নিকট আত্মীয় থাকা সত্ত্বেও ভর্তি পরীক্ষার কমিটি ও প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। সংগঠনটির এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন,আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।তাঁর বোনের বিষয়ে তিনি বলেন,আমার বোন মেধা ও যোগ্যতায় ২য় স্থান অধিকার করেছে।

আইন লংঘনের বিষয়ে তিনি বলেন,নিকটাত্মীয়/পরিবারের কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রস্তুত কমিটিতে ঐ প্রার্থীর কেউ থাকতে পারবে না তা আমি জানতাম না। আর আমাকে চিঠি দিয়েও তা জানানো হয়নি।এমন কি সিনিয়র কোনো শিক্ষকও আমাকে জানায় নি।

তিনি আরো বলেন,আমি সদ্য নিয়োগ পাওয়া।তাইএ নিয়মটি আমার জানা ছিল না। জানলে এ কমিটিতে থাকতাম না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গত কয়েকদিন আগে উপাচার্য ড. এক এম নূর উন নবী বলেন,এই শিক্ষক কোনো দুর্নীতি করেন নি।তবে তাঁর পরীক্ষার্থী আছে এমন সংবাদ জানা না থাকার কারণে তাঁকে পরীক্ষা কমিটিতে রাখা হয়েছিল।

সংগঠনটির নেতারা আরো অভিযোগ তুলে বলেন, এছাড়াও এ ইউনিটের সমন্বয়ক ১৮ টি ওএমআর শিটের কোন হদিস দিতে পারেননি। পরবর্তীতে শিক্ষকদের চাপে তিনি সেগুলো ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন। উল্লেখ্য যে,ও এম আর শীট ছাড়াই এ ইউনিটের ১১৬০২৪,১১৩৭৬৭ ও ১১৫৯৫০ (যাদের মেধাক্রম যথাক্রমে ২৪,৩০,৫৩) রোল নম্বরের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।এ ইউনিটের সমন্বয়ক এবং কলা অনুষদের ডিন ড.নাজমুল হকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হয়।

এছাড়াও ঔ ইউনিটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যার মেধা তালিকা নং ১৬১ এবং রোল ১৪৬০২০।এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, এটি ‘টেকনিক্যাল প্রবলেম’ এর কারনে হয়েছে।

এছাড়াও ভাইভার দুইদিনে ১৩ জন ভুয়া প্রার্থী ধরা পড়ে।তাদের পেছনে প্রক্সিদাতারা চিহ্নিত হয়নি।
এবার পরীক্ষায় ভর্তি জালিয়াতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সমাবেশে বলা হয়,এই সমস্ত অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট। প্রগতিশীল ছাত্রজোট অভিযোগ করে তারা এ বিষয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিলেও তিনি কোন প্রতিক্রিয়া দেখান নি। তারা আরও জানান আগামী এক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা না হলে প্রগতিশীল ছাত্রজোট সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ধর্মঘটের ন্যায় কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।

মিছিল ও সমাবেশ শেষে উপাচার্যের সাথে দেখা করার জন্য ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে যায়। কিন্তু উপাচার্য মিটিংয়ের কথা বলে জোট নেতাদের সাথে দেখা করেননি। পরে জোট নেতারা উপাচার্য ্কার্যালয়ের সামনেই স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

উল্লেখ্য,গত ৫ ও মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয় ১৩ মে।এরপর গত ১৮ ও ১৯ মে ভাইভা প্রার্থীদের ভাইভা নেওয়া হয়।২১মে ভাইভা প্রার্থীদের ১ম মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়।আগামী ২৬ ও ২৭ মে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।

এ বছর ১হাজার ১৯৫ টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৯০হাজার ৪০২ জন প্রার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় সহ শহরের ২০ টি ভেন্যুতে এ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

তবে ভর্তি জালিয়াতিতে পাওয়া অভিযোগ তদন্ত না করলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর থেকে দায়মুক্ত হবেন না বলে অনেকেই মনে করেন।



মন্তব্য চালু নেই