টেস্ট পরীক্ষা না নিয়েই ছাত্রছাত্রীর ফরম ফিলাপ
বেগমগঞ্জ বাবুপুর-জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
বেগমগঞ্জ বাবুপুর-জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টেস্ট পরীক্ষা না নিয়ে একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর ফরম ফিলাপ ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, তিনি বিজয় নগর সাকিনের বক্তার মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান রিয়াজ (রোল ৭২) সহ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী টেস্ট পরীক্ষা না দিয়েও প্রধান শিক্ষকের চাহিদা মত টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করেছে। প্রধান শিক্ষক গোলাস ছারওয়ার স্কুল কমিটি ও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এরূপ বাণিজ্য চালিয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানায়, ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনেক ছাত্রছাত্রী টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া স্বত্ত্বেও টাকার বিনিময়ে তাদের ফরম ফিলাপ করে দিয়েছে।
এদিকে অভিভাবকরা ও সচেতন মহল সাংবাদিকদের জানান, প্রধান শিক্ষক স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাথে যোগাযোগ না করে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করছে।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক ভর্তি ফি ৮৫০ টাকা আদায়ের রশিদও প্রদান করছে না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, ৮৫০ টাকা করে নেয়ার জন্য স্কুলের সভাপতির নির্দেশ বলে জানান। তবে তিনি এ বিষয়ে কোন রেজুলেশন দেখাতে পারেননি। অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় ও ফরম ফিলাপের ব্যাপারে এলাকায় মাইকিং ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং অভিভাবকগণ অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের কারনে স্কুলের দরজা ভেঙ্গে ফেললে তিনি তা সমাধান করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়ে তা আজো সমাধান করেন নাই।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট জানাননি এবং থানায় কোন অভিযোগও করেন নাই। সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের বাবুপুর-জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত অতিরিক্ত ভর্তি ফি ৮৫০ টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসী অতিরিক্ত আদায়কৃত ফি ফিরিয়ে দেওয়া ও সরকারী নীতিমালা অনুয়ায়ী ভর্তি ফি নেওয়ার দাবিতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হয়।
উপজেলার বাবুপুর-জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম, জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, স্বপন, বলেন, বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক গোলাম সারওয়ার বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত নীতিমালাকে উপেক্ষা করে জোরপূর্বক ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ভর্তি আদায় করছে। ভর্তি ফি আদায়ের ক্ষেত্রে তারা কোনো প্রকার রশিদও প্রদান করছে না। বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী বিবি ফাতেমার রিকসাচালক বাবা বলেন, আমার মেয়েকে ভর্তি করতে গেলে শিক্ষকরা ৮৫০ টাকা নেয়। যা আমার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ছিল।
৭ম শ্রেণীর ছাত্রী তানিয়া আক্তারের মা তাজনাহার বেগম বলেন, আমার মেয়েকে ভর্তি করতে গেলে শিক্ষকরা ৮৫০ টাকা দিতে বলে। এ টাকা না দিলে তারা আমার মেয়েকে ভর্তি করবে না বলে জানায়। কিন্তু আমাদের আশেপাশের অন্যান্য স্কুলে ভর্তি ফি নিচ্ছে ৫০০ টাকা করে।
অভিভাবক মনির হোসেন, নুরজাহান বেগমও একই অভিযোগ করে বলেন, যেখানে ভর্তি বাবদ সরকার নীতিমালা করে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেখানে এই স্কুলে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষকরা অভিভাবকদের জিম্মি করে অতিরিক্তি ফি আদায় করছে। এভাবে তারা বিভিন্ন শ্রেণীতে শত শত ছাত্রছাত্রীর ভর্তি করতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই আমরা অবৈধ প্রক্রিয়া অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং প্রশাসনের উধক্ষর্তন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তির দাবী জানাই।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা খুলে দেয়।
মন্তব্য চালু নেই