বৃদ্ধের ৩ কোটি টাকার জমি ‘রেজিস্ট্রি’ করে নিলেন তিন এসআই !

ময়মনসিংহের ভালুকার শিল্পাঞ্চল পাড়াগাঁও মৌজায় মোহাম্মদ আবজস আলী নামে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের প্রায় তিন কোটি টাকার এক একর ৫৪ শতাংশ জমির দলিল ওই থানার তিন এসআই ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা প্রলোভনে রেজিস্ট্রি (নিবন্ধন) করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তারা ভালুকা থানায় কর্মরত অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ‘ব্যবসায়ী’ সেজে ‘আমমোক্তারনামা’র মাধ্যমে এই জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি এই দলিল করার জন্য জমির মালিককে তারা একটি পয়সাও দেননি।

এদিকে, জমিটি ফেরত পাওয়ার আশায় ওই বৃদ্ধ আদালতের আইনজীবীর মাধ্যমে ওই দলিলের রেজিস্ট্রি বাতিলের চেষ্টা করলে থানার ওসি তাকে উল্টো দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রচণ্ড আতঙ্কে ভুগছেন ওই বৃদ্ধসহ তার পরিবার। হয়রানিমূলক গ্রেফতারের আশঙ্কায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার সন্তানেরা। এমনকি বৃদ্ধের কাছ থেকে ‘পণ্ডরত রহিতপত্রের’ (অসম্মতি জানিয়ে নতুন দলিল বাতিল করার চেষ্টা) দলিলের কাগজপত্র জোর করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এদিকে, বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার অজুহাতে জমির মালিকের কাছে উল্টো ১২ লাখ টাকা দাবি করেছেন ওই থানারই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।

মোহাম্মদ আবজস আলী ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার নিচ্ছাম পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।

জমির মালিক আবজস আলীদলিল ও বৃদ্ধের আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ সূত্রে জানা যায়, ভালুকা শিল্পাঞ্চলের পাড়াগাঁও মৌজার সাবেক ৯৫, বিআরএস ১৫০৫, ১৫১৯ নং দাগে এক একর ৫৪ শতাংশ আবজস আলীর পৈত্রিক জমি গত ৯ ফেব্রুয়ারি ১৩৬০ নং আম-মোক্তারনামা দলিল রেজিস্ট্রি হয়। ভালুকা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিলের গ্রহীতা হলেন ভালুকা মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ফায়েজুর রহমান, রুহুল আমিন ও ফারুক হোসেন। পুলিশ কর্মকর্তারা কর্মস্থলে বসেই বৃদ্ধকে ভুল বুঝিয়ে ও মিথ্যা প্রলোভনে জমিটি রেজিস্ট্রি করে নেন। আর দলিলপত্রে পুলিশের ৩ এসআই তাদের পেশা হিসেবে উল্লেখ করেন ‘ব্যবসা’। এছাড়া গ্রহীতার তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় আরও ৪ ব্যক্তি। অথচ আইন অনুযায়ী জমির মালিক ও তার সন্তানদের অনুমতি ছাড়া ‘আমমোক্তারনামা’ করার কোনও সুযোগ নেই।

জমির মালিকের অভিযোগ, গ্রহীতার তালিকায় থাকা স্থানীয়রা ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। এরা হলেন, ভালুকার হবিরবাড়ি গ্রামের হীরা মিয়া, পাড়াগাঁও গ্রামের জজ মিয়া, হবিরবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও পাশ্ববর্তী ত্রিশাল উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে এই জমিটির বাজার মূল্য আনুমানিক ৩ কোটি টাকা বলে স্থানীয়রা জানান। পরে জমির মালিক বৃদ্ধ আবজস এই দলিল পণ্ডরত রহিতপত্র করতে গত ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জজ আদালতের এক আইনজীবীর মাধ্যমে গ্রহীতাদের লিগ্যাল নোটিশ দেন।

সূত্রে আরও জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আবজস ভালুকা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে পণ্ডরত রহিতপত্র দলিল করতে গেলে ভালুকা মডেল থানার ওসি মামুনুর রশিদ তার কাছ থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরে থানার ওসি মামুনুর রশিদ বিষয়টি মীমাংসার নামে আবজসের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই টাকা জমির গ্রহীতাদের দিতে হবে বলেও জানান তিনি। যদিও জমির গ্রহীতারা জমির দলিল হাতিয়ে নেওয়ার সময় জমির মালিককে এক পয়সাও দেন না।

ঘটনাটি জানতে চাইলে বৃদ্ধ আবজসের ছেলে আমীর হোসেন জানান, তার এক সহোদর জামাল উদ্দিনের প্ররোচনায় স্থানীয় ৪ ভূমিদস্যুর মাধ্যমে থানার ৩ পুলিশ তার বাবার কাছ থেকে জমির দলিল করে নেয়। কিন্তু, আম-মোক্তারনামা দলিলে মেয়াদ না দেওয়ায় বাবা আশঙ্কায় রয়েছেন। আমমোক্তারনামায় মেয়াদ না দেওয়া হলে সেই জমি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। জমির গ্রহীতা সাজা পুলিশ কর্মকর্তারা ওই জমি তৃতীয় কোনও পক্ষের কাছে বিক্রি করার সুযোগ খুঁজছিলেন বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বাবু জানান, গ্রহীতাদের লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হলেও এখনও তারা ব্যাখা দেননি।

বৃদ্ধ আবজস আলী বলেন, মিথ্যা প্রলোভনে ও ভুল বুঝিয়ে ওরা আমার কাছ থেকে জমি নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালুকা মডেল থানার এসআই ফায়েজুর রহমান মুঠোফোনে অভিযোগটি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের দাবিতে তিনিসহ তাঁর সহকর্মীরা আবজসের জমির দলিল করে নিয়েছেন। গ্রহীতা তালিকায় স্থানীয় আরও কয়েকজন রয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার আব্দুর রউফের কাছে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) থানায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে ।

f0f7014060e0fb6e23de67c912383315-
অভিযুক্ত এসআই’র মধ্যে একজন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মুঠোফোনে বলেন, গতকাল সোমবার ভালুকা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার তাকে ডেকে বিষয়টি জানান।পরে তিনি এ বিষয়ে স্থানীয়দের নিয়ে মীমাংসা করবেন বলে জানান।

দাতা অর্থাৎ জমির মালিকের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

ওসি কাউকে হুমকি দেননি বা কাগজপত্রও নেননি দাবি করে আরও জানান, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। একইসঙ্গে থানায় তিন এসআই-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, দাতাদের মীমাংসার জন্য খবর দেয় বলেও জানা গেছে। বাংলা ট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই