বুধবার শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা
বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত এসএসসি পরীক্ষার পর প্রায় একই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন মহল থেকে আসা হরতাল প্রত্যাহারের আবেদনে সাড়া না দেয়া বিএনপিজোট এই পরীক্ষার শুরুর দিন হরতাল রাখেনি। তবে অবরোধ চালিয়ে যাবে এই জোট। বাকি পরীক্ষার দিনগুলোতে তাদের কর্মসূচি কী হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সিটি নির্বাচনের মধ্যে এ পরীক্ষা শুরু হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে রয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতেই বুধবার সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে শুরু হবে এ পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থী। ১১ জুন পর্যন্ত তত্ত্বীয় বিষয়ের পরীক্ষা হবে। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ১৩ জুন থেকে ২২ জুন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। এ পরীক্ষাকে সামনে রেখে পরীক্ষার্থীদের প্রতি শুভেচ্ছা বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে নাশকতায় কোনো পরীক্ষার্থীর ক্ষতি হলে তার দায় বিএনপি জোটকে নিতে হবে। আমি হরতাল-অবরোধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনাকারী জোটের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি পরীক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে দিন। দয়া করে কোনো হটকারী ঘটনা ঘটাবেন না। আমি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই- দেশের যেকোন স্থানে আমাদের একজন পরীক্ষার্থীরও যদি কোনো ক্ষতি হয়, তার দায়দায়িত্ব আপনাদেরই বহন করতে হবে। মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, ‘সঙ্কটের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। জাতির দুর্ভাগ্য যে, একটি রাজনৈতিক জোটের বিবেকবর্জিত অব্যাহত হরতাল-অবরোধের কারণে এসএসসির রুটিন অনুযায়ী একটি পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হয়নি। পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি, মতামত ও পরামর্শের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা যেকোন পরিস্থিতিতে রুটিনমাফিক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।’
প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরীক্ষার্থীদের মন দিয়ে লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী। সে হিসেবে এবারে পরীক্ষার্থী কমেছে ৬৭ হাজার ৪৯০ জন। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা। ৮৩০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন; যা গতবারের চেয়ে ২০১টি বেশি। পরীক্ষা কেন্দ্র গতবারের চেয়ে ৬৭টি বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৪১৯টি কেন্দ্র থাকছে। এছাড়া বিদেশে ৭টি কেন্দ্রে ২৪১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। বিদেশে কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- দোহা, আবুধাবি, জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলি, দুবাই এবং বাহরাইন।
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩৩৪টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২২৭ জন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ১৮৪টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৭০৯ জন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ১৭৫টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৯৭৪ জন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ২১২টি কেন্দ্রে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৫ জন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ৯২টি কেন্দ্রে ৮০ হাজার ৬৯৩ জন, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ১০৯টি কেন্দ্রে ৫৬ হাজার ৬০০ জন, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ৭৫টি কেন্দ্রে ৫৮ হাজার ৬৩ জন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ১৮২টি কেন্দ্রে ৯০ হাজার ৩৮১ জন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ৪১৮টি কেন্দ্রে ৮৪ হাজার ৩৬০ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৬২০টি কেন্দ্রে ৯৮ হাজার ২৪৭ জন, ডিআইবিএস-এ ১৮টি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৩৪৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার বিদেশে সাতটি কেন্দ্রে ২৪১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন, এর মধ্যে ১১০ জন ছাত্র এবং ১৩১ জন ছাত্রী।
২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষেধ
পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে অনধিকার প্রবেশ নিষেধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে এবং পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স-এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ব্যতীত জনসাধারণের অনধিকার প্রবেশ সম্পূণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ডিএমপি।
এই আদেশ বুধবার থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বলবৎ থাকবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে নানা উদ্যোগ
বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে শিক্ষাসচিবের স্বাক্ষরে আধাসরকারি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলম নাহিদ বলেন, ‘কোনোভাবেই দুষ্টচক্রকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বা ফেসবুকে প্রশ্নপত্রে নামে সাজেশন প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া হবে না। আমাদের সবগুলো এজেন্সি তৎপর থাকবে, ধরতে পারলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের সকল ফটোকপি মেশিন বন্ধ রাখা হবে। কোচিং সেন্টারগুলো কড়া নজরদারিতে থাকবে।’
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৭তম ফ্লোরে ১৭২২ নম্বর কক্ষে একজন উপসচিবের দায়িত্বে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। তার মোবাইল ফোন নম্বর- ০১৭১১-৩১৭১৩৬। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর: ৯৫৪৯৩৯৬, ০১৭৭৭-৭০৭৭০৫ ও ০১৭৭৭-৭০৭৭০৬।
২৫ বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা
এবার বাংলা প্রথম পত্র, রসায়ন, পৌরনীতি, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার শিক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রসহ মোট ২৫টি বিষয়ে পরীক্ষা হবে সৃজনশীল প্রশ্নে।
প্রসঙ্গত, এইচএসসিতে ২০১২ সালে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হয়। আর ২০১৩ সালে বাংলা প্রথম পত্র, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, পৌরনীতি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়েছিল। গত বছরও ২৫টি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হয়েছিল।
এদিকে, এবারই প্রথমবারের মতো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরতদের শ্রুতিলেখক হিসেবে নেয়া যাবে। শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এবং বুদ্ধি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীরা অন্য সময়ের মত এবারও বাড়তি ২০ মিনিট সময় পাবেন।
মন্তব্য চালু নেই