বিয়ে করে ঢাকায় সংসারও পেতেছিলেন থমাস পিটার
এটিএম কার্ড জালিয়াতির মূল হোতা থমাস পিটার প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। বিয়েও করেছেন বাংলাদেশে। এই ঘরে দুই সপ্তাহ বয়সী একটি সন্তানও রয়েছে আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের এই হোতার। পুলিশ বলছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু বের হয়ে আসবে। মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়ার আগে পোল্যান্ডের এই নাগরিক বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে একই কায়দায় জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। বাংলাদেশের অবস্থানকালে থমাস পিটার চক্র ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। তাকে সহযোগিতা করেছে ব্যাংকেরই আইটি বিভাগের কয়েকজন কর্মী। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আদম ব্যবসার সূত্র ধরে বাংলাদেশে আসেন থমাস। শীর্ষ এক আদম ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে কিছু লোকও বিদেশে পাঠায়। একটি দেশের ভিসা অফিসারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে আদম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টাও ছিল তার। কিন্তু তার প্রধান টার্গেট ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। এটি ছিল তার খুবই সিক্রেট ক্রাইম।
ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি জন্য বাংলাদেশ খুবই নিরাপদ ভেবে তিনি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর অংশ হিসেবে তিনি হোটেল হলিডে প্লানেট’র এক রিসিভসোনিস্টকে বেছে নেন। নাম মেরিনা। বিয়ে করার জন্য বাংলাদেশি মেরিনার সঙ্গে ভাব জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বিপুল অর্থবিত্ত দেখে পিটারের ফাঁদে পা দেন মেরিনা। আগের স্বামীর ঘরে বেশিদিন সংসার হয়নি তার। আছে সে ঘরের একটি সন্তানও। পিটারের সঙ্গে কিছুদিন লিভ টুগেদারের পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন বছরখানেক আগে। এরপর গুলশান-২ এলাকার ১১২নং রোডের ১২নং বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানেই তারা বসবাস করতেন। সম্প্রতি মেরিনার গর্ভে তার এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। এ নবজাতকের বয়স দুই সপ্তাহ।
পিটার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ঘটনার পর একবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার মত পাল্টান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পিটার জানান, ঢাকায় স্বাভাবিক চলাফেরার সময় তিনি মাথায় ক্যাপ পরতেন না। তবে এটিএম বুথে ঢুকে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে যখন গ্রাহকের টাকা তুলতেন তখন নিজের চেহারা আড়াল করতে মাথায় ক্যাপ পরতেন।
গত ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয় একটি চক্র। তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে। এরপর ঘটনার শিকার ২১ জন সাধারণ গ্রাহক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল), সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে টনক নড়ে। এ সেক্টরের কড়া নিরাপত্তা সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকও দ্রুত এগিয়ে আসে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিবি পুলিশের অব্যাহত চেষ্টায় অবশেষে ধরা পড়েন এই জালিয়াতির মূল হোতা থমাস পিটার।
মন্তব্য চালু নেই