আবারো বখাটের চাপাতির কোপে ক্ষতবিক্ষত স্কুলছাত্রী
১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে না স্কুলছাত্রী জাকিয়া সুলতানার। বর্তমানে সে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে রাজধানীর পিলখানায় অবস্থিত বিজিবি হাসপাতালে।
জাকিয়ার বাড়ি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার লেবার লাইন পাড়া এলাকায়। সে ওই এলাকার বিজিবি সদস্য মো. জমসেদ আলীর মেয়ে। তাদের স্থায়ী বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার আমগাঁও গ্রামে হলেও তারা বোচাগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকে।
সে সেতাবগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমী মাধ্যমিক স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা জমসেদ আলী সাতক্ষীরা জেলায় বিজিবিতে কর্মরত।
ঘটনার সূত্রপাত র্দীঘদিনের। সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে গত মাসে ৭ সেপ্টেম্বর। এদিন সকালে জাকিয়াদের বোচাগঞ্জের লেবার লাইন পাড়ার বাসায় ঢুকে প্রকাশ্যে জাকিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর জমখ করে পালিয়ে যায় ইব্রাহিম চৌধুরী নামে এক বখাটে।
সে বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ পৌরশহরের মিলরোড ছটকুর মোড় এলাকার কফিলউদ্দীন ওরফে বাচ্চা চেয়ারম্যানের ছেলে। এ ঘটনার পর ওইদিন দুপুরেই পুলিশ তাকে আটক করেছে। বর্তমানে সে দিনাজপুর জেলা কারাগারে আছে।
এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জাকিয়াকে রাস্তা-ঘাটে উত্যক্ত করে আসছিল ইব্রাহিম। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ইব্রাহিম। এতে জাকিয়া রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সে। এরই জের ধরে জাকিয়াদের বাড়িতে প্রবেশ করে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাকে আহত করেছে ইব্রাহিম। এসময় তার চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে পালিয়ে যায় ইব্রাহিম।
এ ঘটনার পর এলাকাবাসী তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বর আহত অবস্থায় জাকিয়াকে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে বর্তমানে জাকিয়াকে ঢাকার পিলখানায় অবস্থিত বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাকিয়ার বাবা জমসেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে বখাটে ইব্রাহিম চৌধুরী আমার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল। স্কুল যাওয়ার পথে প্রায় আমার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিত সে। বিষয়টি আমি ইব্রাহিম চৌধুরীর পরিবারকে জানাই। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বোচাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। কিন্তু কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ।
এদিকে পুলিশকে জানানোর কারণে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ইব্রাহিম। তার উৎপাত আরো বেড়ে যাওয়ায় স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় জাকিয়া।
তিনি জানান, ২৫ ডিসেম্বর আসামির বিরুদ্ধে করা জিডি অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নিলে আমার মেয়েকে হয়তো নৃশংসভাবে জখম হয়ে গুরুতর আহত হতে হতো না। শুধু তাই নয়, মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ হয়রানি করেছে। হত্যা চেষ্টা মামলা না নিয়ে নারী নির্যাতন মামলা নিয়েছে। আমি মামলাটি বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় সেতাবগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমী মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোলেমান শাহিন জানান, জাকিয়া সুলতানা (১৩) আমাদের স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে, কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারছে না। আমরা উপজেলার ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিকভাবে চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছি।
বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তিনি বলেন, জিডির পরই পুলিশ ব্যবস্থা নিলে এ রকম ঘটনা ঘটতো না।
এ বিষয়ে বোচাগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি মো. হাবিবুল হক প্রধান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৭ সেপ্টেম্বরই বখাটে ইব্রাহিম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইতোপূর্বে স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র না পাওয়ায় চার্জশিট দেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সিলেটে খাদিজা আক্তার নার্গিস নামে সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে কুপিয়েছে এক ছাত্রলীগ নেতা। পরীক্ষা দিতে সিলেটের এমসি কলেজে গিয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে খাদিজাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম (২৬)। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। এছাড়াও সম্প্রতি দেশে বখাটের উৎপাত চরমভাবে বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্কুলছাত্রী হচ্ছে সংবাদের শিরোনাম।
মন্তব্য চালু নেই