বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্লগার হত্যার খবর
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার মুক্তমনা ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে বুধবার রাতে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
বাংলাদেশের এই ব্লগার হত্যার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম বিবিসি ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে হত্যা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, অনলাইনে ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ প্রকাশকারী বাংলাদেশের আইনের এক শিক্ষার্থীকে রাজধানী ঢাকায় হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার রাতে একটি ট্রাফিক জংশনের কাছে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাকে। ২৮ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী ধর্মনিরপেক্ষ প্রচারণা গ্রুপ গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। গত বছর বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সেক্যুলার ব্লগার আক্রান্ত অথবা খুন হয়েছেন। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও সরকার সঠিকভাবে হামলা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা `বাংলাদেশি কর্মী নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে হত্যা` শিরোনামে প্রতিবেদনে বলছে, আইনের এক ছাত্র খুন হয়েছেন, যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাস্তিকতা বিষয়ক পোস্ট করেছিলেন। আলজাজিরার ঢাকা প্রতিনিধি তানভির চৌধুরীর বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, দেশটিতে এ নিয়ে ২৮ বছর বয়সী নাজিমুদ্দিন সামাদসহ ধর্মনিরপেক্ষ সাত কর্মী খুন হলেন।
মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে ধর্মবিরোধী লেখা ও ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা ২০১৩ সালের আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার কারণে তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশে ইসলামের সমালোচনাকারী ধর্মনিরপেক্ষ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকে ইসলামের সমালোচনাকারী বাংলাদেশের আইনের এক শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মৌলবাদীদের তৈরি ৮৪ নাস্তিক ব্লগারের হিট লিস্টে ছিলেন নাজিমুদ্দিন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলামের বরাত দিয়ে এতে আরো বলা হয়েছে, বুধবার রাতে অন্তত ৪ হামলাকারী নাজিমুদ্দিনের মাথায় রামদা দিয়ে আঘাত করে। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে খুব কাছে থেকে তার মাথায় গুলি করে এক হামলাকারী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহত ওই ব্লগারের বন্ধু ওয়াফি চৌধুরীর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান বলছে, পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে এক মাস আগে সামাদ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে। কিন্তু শিগগিরই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করবেন বলে ওয়াফিকে জানান তিনি।
ব্রিটেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল `বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থীদের সমালোচনাকারী এক শিক্ষার্থীকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা` শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুক পেইজে ইসলামী চরমপন্থীদের নিয়ে মন্তব্যের পর বাংলাদেশে এক শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। দেশটিতে এটি ধর্মনিরপেক্ষ কর্মী ও ব্লগারদের হত্যার সর্বশেষ ঘটনা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলামের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, তবে কোনো গোষ্ঠী ওই হত্যার দায় স্বীকার করেনি।
এছাড়া ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ব্লগার নাজিমুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই