বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ

নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ষষ্ঠ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নে আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬’ অনুযায়ী ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম। যা দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থান নির্দেশ করেছে।

বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এ তথ্য বর্ণনা করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।

লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়-এ গভীর উপলব্ধি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর নারীসমাজের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন। তিনি আমাদের উপহার দেন বাহাত্তরের অনন্য সংবিধান। যা কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই বলেনি; অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে নারী-পুরুষের সমতাও সমুন্নত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত করেন। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রথম বলিষ্ট পদক্ষেপ। যার ফলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম সংসদেই নারীরা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়।

সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে নারী উন্নয়নের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের নারীসমাজের উন্নয়নে কাজ করেছে। বর্তমান সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এখন মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সব সকল মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৪টি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নারীর সামর্থ্য উন্নিতকরণ, নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, নারীর মতপ্রকাশ ও মতপ্রকাশের মাধ্যম সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার এবং সরকার প্রধান হিসেবে তার বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরে তিনি জানান, অর্জিত সাফল্যে নারীরা আজ সমাজ আলোকিত করেছে। এই পুরস্কার এদেশের সব নারীর।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটিার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে শপথগ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। নবনিযুক্ত দায়িত্বরত ইসি ভবিষ্যতে তাদের অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিনাবিচারে কারারুদ্ধরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। তাছাড়া যদি রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তবে আইনে সে বিধানও রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, ‘আমি জেলে থাকাবস্থায় জানতে পারি, অনেক মানুষ বিনা অপরাধে জেলে আটক অবস্থায় রয়েছে। এসব আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে জেল থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। কিছু এনজিও ও সরকারি জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে এসব ব্যক্তিকে কারামুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলমান আছে। ’

শেখ হাসিনা জানান, যারা কারাগারে আটক রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে। এসব মামলা তদন্তাধীন কিংবা বিচারিক পর্যায়ে থাকতে পারে। বিচারিক পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে এসব মামলায় কারাগারে আটক ব্যক্তিদের জামিনে মুক্তি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বিচারকের এখতিয়ারাধীন। সরকার এসব মামলা দ্রুতবিচারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার দ্রুতবিচার আদালত ও ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ মামলার বিচারকার্য করতে বিভিন্ন অবকাঠামোগত ও সংস্থারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়া অপরাধীরা যাতে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন আটক না থাকে সে লক্ষ্যে সরকার তাদের দ্রুতবিচার সম্পন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার দীর্ঘদিন আটক অপরাধীদের সংখ্যা জানার জন্য তাদের পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কামরুল আশরাফ খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আর্ন্তজাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে জানুয়ারি ২০০৯ হতে অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত বিলুপ্ত বিনিয়োগ বোর্ড ও নবগঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হতে ১০০ শতাংশ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগে সর্বমোট ১ হাজার ৩৭৬টি শিল্প প্রকল্পে অনুকূলে নিবন্ধন দিয়েছে। এসব শিল্প প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ সর্বমোট ২ হাজার ১১৩ মিলিয়ন টাকা যা ২৭ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশ্বব্যাংকের ইজি অফ ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। আগামী পাঁচবছরে তা দুই অঙ্কে তথা ৯৯ কিংবা তার চেয়ে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিআইডিএ ব্যক্তিগত ও সরকারের সব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ব্যাপক কার্যক্রম নিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই