বিশ্বের সেরা দশ রোমান্টিক প্রেমের সিনেমা

ভালবাসা দিবস উপলক্ষে দ্য গার্ডিয়ান এবং অবজার্ভার প্রকাশ করেছে তাদের দৃষ্টিতে সেরা দশ রোমান্টিক সিনেমার তালিকা।

১০. জুলস অ্যান্ড জিম: সাল ১৯৬২, স্থান প্যারিস। ফরাসি নিউ ওয়েভ সিনেমার স্বর্ণযুগ সেটা। মুক্তি পেল ‘জুলস অ্যান্ড জিম’। মানবীয় আবেগের জটিলতার প্রকাশ এবং পর্দায় নারীর প্রথাগত উপস্থাপনের বাইরে যাওয়ার প্রচেষ্টা – দুইয়ে মিলে নতুন এক মাইলফলকের সৃষ্টি করলো ত্রিভূজ প্রেমের এই গল্প।

ক্যাথরিন নামের এক ফরাসি নারী একই সঙ্গে প্রেমে পড়েছে দুই তরুণের। একজন জুলস, জাতে জার্মান। অপরজন জিম, ফরাসি। দুই পুরুষও পাগলের মতোই ভালবাসে ক্যাথরিনকে। দুজনেরই সঙ্গেই প্রেম এগিয়ে যেতে থাকে সমান তালে। কিন্তু এর পরিণতি কি?

এরকমই এক গল্পের সঙ্গে জিন মরেউ, অস্কার ওয়ার্নার এবং হেনরি সারের অভিনয় যোগ করেছে অনন্য মাত্রা। ষাটের দশকের সিনেমাটি বক্স-অফিসেও গড়েছিল ইতিহাস। সেই সঙ্গে জানান দিয়েছিল নতুন এক যুগের আগমনের, যেখানে নারীর অনুভূতিকেও দেখানোর সাহস দেখাতে শুরু করতে পারেন নির্মাতারা।

৯. আ রুম উইথ আ ভিউ: কদিন বাদেই বিয়ের পিড়িতে বসছে লুসি। বোন শার্লটকে নিয়ে তাই সে বেড়াতে এসেছে ইতালির ফ্লোরেন্সে। খুঁজে পেতে একটা হোটেলে উঠলো বটে তারা, কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখে সেখানে নেই কোনো জানালা। ঠিক এমন সময়ই তাদের সাহায্যে এগিয়ে এল মিস্টার এমারসন এবং তার তরুণ ছেলে জর্জ। স্বাপ্নিক এই তরুণের প্রেমেই অবশেষে পড়ে যায় লুসি। ওদিকে ফ্লোরেন্সের দিনগুলি শেষ হয়ে এলে লুসি টের পায়, ব্রিটেনে, নিজের শহরে ফিরে যেতে হবে তাকে তার বাগদত্তের কাছেই।

১৯৮৫ সালের সিনেমাটি স্মরণীয় হয়ে আছে মূল চরিত্রে হেলেনা বোনহ্যাম কার্টারের অনবদ্য অভিনয়ের জন্য। ই এম ফ্রস্টারের উপন্যাস অবলম্বনে এটি পরিচালণা করেছিলেন জেমস আইভরি। অভিনয়ে হেলেনাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন ম্যাগি স্মিথ, ডেনহম এলিয়টের মতো শিল্পীরা।

৮. ইটারনাল সানশাইন অফ আ স্পটলেস মাইন্ড: ব্রিটিশ অভিনেত্রী কেইট উইন্সলেটের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট ‘টাইটানিক’ হলেও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তাকে সবসময়ই মনে রাখবেন ‘ইটারনাল সানশাইন অফ আ স্পটলেস মাইন্ড’ সিনেমার নীল চুলের স্বাধীনচেতা মেয়ে ক্লেমেন্টাইন ক্রসিনস্কি হিসেবেই। অন্যদিকে কৌতুকাভিনেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেলেও জিম ক্যারির ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলফলক যে এই সিনেমাটিই- সেটাও স্বীকার করবেন সবাই।

প্রথম পরিচয়, প্রেমে পড়া, ধীরে ধীরে ভালবাসায় নিমজ্জিত হওয়া, আবার সেই ভালবাসার প্রতিই একসময় নিরাসক্ত হয়ে পড়া – আর দশটা মানবিক সম্পর্কের মতোই জোয়েল এবং ক্লেমেন্টাইনের ভালোবাসার গল্প। বিরহের তিক্ত স্মৃতিগুলোকে ভুলে যেতে দুজনেই শরণাপন্ন হয় একটি মানসিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের। তিক্ত স্মৃতি ভুলতে ভুলতেই তারা নতুন করে আবিষ্কার করে তাদের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার মুহূর্তগুলোকে।

এমরকমই এক গল্পকে আলেকজান্ডার পোপের কবিতা থেকে ধার করা শিরোনাম দিয়ে সেলুলয়েডের ফিতায় বেঁধে ফেলেছিলেন মাইকেল গন্ড্রি। চার্লস কফম্যানের অনবদ্য চিত্রনাট্যে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে আরও উপভোগ্য।

৭. হ্যানা অ্যান্ড হার সিস্টার্স: রোমান্টিক সিনেমা নিয়ে কথা হবে, আর উডি অ্যালেনের নাম একবারও উঠবে না- তা কী করে হয়! ‘ম্যানহ্যাটান’ খ্যাত এই নির্মাতার সবচেয়ে বড় হিট ১৯৮৬ সালের ‘হ্যানা অ্যান্ড হার সিস্টার্স’। সিনেমায় মিয়া ফ্যারো অভিনয় করেছেন হ্যানা নামের এক গৃহবধুর চরিত্রে, যার স্বামী এলিয়ট প্রেমে পড়ে যায় তারই বোন লিয়ের। ওদিকে একই সময়ে হ্যানার আরেক বোন হলির সঙ্গে প্রেমে মগ্ন হ্যানারই সাবেক স্বামী মিকি।

সিনেমায় এলিয়টের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কার সেবার বাগিয়ে নিয়েছিলেন মাইকেল কেইন। মিয়া ফ্যারোও প্রশংসিত হয়েছিলেন অদ্ভূত রকমের মানসিক সঙ্কটের মধ্যে থেকেও দৃঢ়চেতা এক চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে।

৬. দ‍্য অ‍্যাপার্টমেন্ট: ‘সাম লাইক ইট হট’ মুক্তির পরের বছরই নির্মাতা বিলি ওয়াইল্ডার দর্শকদের উপহার দিলেন আরেকটি কালজয়ী কমেডি- ‘দ‍্য অ‍্যাপার্টমেন্ট’। বক্স-অফিসে দারুন জনপি্রয় হওয়া সিনেমাটি সমালোচকদেরও মন জয় করে নিয়েছিল সমানভাবে। জিতে নিয়েছিল সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালনা এবং সেরা চিত্রনাট‍্যসহ ৫ টি অস্কার।

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র বাড ব‍্যাক্সটার নামে এক কেরানি, যে নিজের অ‍্যাপার্টমেন্টটিকে অফিসের সহকর্মীদের যৌনক্রিয়ার জন্য ভাড়া দিয়ে থাকে। একদিন নিজের ঐ অ‍্যাপার্টমেন্টই সে আবিষ্কার করে তার স্বপ্নকন্যাকে, যে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে তাদেরই পরিচিত একজনকে।

বিলি ওয়াইল্ডারের এই সিনেমার অন‍্যতম গুণ, ছবিটি একদমই বাহুল্যবজর্িত। অত‍্যন্ত স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়েছে সিনেমার কাহিনি।

০৫. ইন দ‍্য মুড ফর লাভ: স্বামী বিশ্বাসঘাতকতা করছে স্ত্রীর সঙ্গে। প্রতারিত এই নারীর সমব‍্যাথী তারই মতো আরেক পুরুষ, যে ছলনার স্ত্রীর ছলনার শিকার। নিজেদের দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে নিতে একসময় একে অপরকে ভালবেসে ফেলেন তারা। কিন্তু নিজেরা দাম্পত‍্যজীবনে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না বলে মনের কথা মনেই চেপে রাখেন।

হংকং-এর নির্মাতা ওং কার-ওয়াইয়ের ‘ইন দ‍্য মুড ফর লাভ’-এর গল্প এমনই স্পর্শকাতরতায় পূর্ণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রধান দুই চরিত্রে টনি লিওয়াং এবং ম‍্যাগি চিওয়াং-এর অভিনয়। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে সিনেমাটির চিত্রগ্রহণ। অনুপম দৃশ্যবিন‍্যাসের কারণেই সিনেমাটি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের বিশেষ পি্রয়।

সেইসঙ্গে সিনেমার বিয়োগান্তক পরিণতি একে পরিণত করেছে ধ্রুপদী প্রেমের সিনেমায়।

০৪. ব্রেথলেস: সময়টা ১৯৬০ সাল। হলিউডের স্বর্ণযুগের সূর্য তখন অস্তগামী। ফ্রান্সে ঠিক তখনই ‘ব্রেথলেস’ দিয়ে চলচ্চিত্রের ভাষা বদলে ফেললেন নির্মাতা জ‍্যঁ লুক গদার। জন্ম নিল নতুন এক চলচ্চিত্রধারার, যা আজ নিউ ওয়েভ সিনেমা নামে পরিচিত।

সিনেমার গল্প এক ছিঁচকে চোরকে নিয়ে, যে দুর্ঘটনাবশত এক পুলিশকে মেরে ফেলে। এর মধ্যে সে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে এক মার্কিন তরুণীর সঙ্গে। শাস্তির ভয়ে তাকে নিয়ে ইতালি পালাতে চায় সে।

তবে কাহিনি গুরুত্বপূর্ণ নয় এই সিনেমার জন্য। সিনেমার ক্রমিক বয়ানের ধারাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছিলেন গদার। সেই সঙ্গে হলিউডের প্রচলিত চলচ্চিত্রকাঠামোকে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর তার ফলশ্রুতিতে দর্শক মুখোমুখি হতে পেরেছে অভিনব এক চলচ্চিত্রিক অভিজ্ঞতার।

০৩. বিফোর সানরাইজ, বিফোর সানেসট, বিফোর মিডনাইট: এই বছরের সবগুলো পুরস্কার আসরে সেরার খেতাব ঝুলিতে পুরছে রিচার্ড লিঙ্কলেটারের এক যুগ ধরে নির্মিত সিনেমা ‘বয়হুড’। তার আগে এই নির্মাতাকে বিশ্ববাসী চিনেছিল তার রোমান্টিক সিনেমাত্রয়ী ‘বিফোর সানরাইজ’, ‘বিফোর সানসেট’ এবং ‘বিফোর মিডনাইট’ দিয়ে।

তিনটি সিনেমারই কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রেমিক যুগল সেলিন এবং জেসি। ইথান হক এবং জুলি ডেপলি অভিনীত এই দুই চরিত্রের পরিচয়, প্রণয়, বিচ্ছেদ এবং সবশেষে পুনর্মিলন- এমনই সরলরৈখিক গল্প নিয়ে এগিয়ে গেছে সিনেমা তিনটির গল্প। তারপরও এগুলো রোমান্টিক সিনেমাপ্রেমী সব দর্শকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তার কারণ নির্মাণকুশলতা।

অন‍্যরকম, কিন্তু সুন্দর এই প্রেমকাহিনি আড়ম্বরের ধার না ধেরেই সহজভাবে বলে গেছেন পরিচালক। কেবল প্রেমে পড়াই নয়, ভালোবাসার সবগুলো দিক চষে বেড়ানো সিনেমা তিনটি তাই সহজ ভাষায় বলে চলে বেঁচে থাকারই দারুণ সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা।

০২. কাসাব্লাঙ্কা: পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যে কোনো রোমান্টিক সিনেমার তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে হামফ্রে বোগার্ট এবংইনগ্রিড বার্গম‍্যান অভিনীত এই সিনেমাটির কথা না বললে।

গল্পের মোড়ে মোড়ে দ্বন্দ্ব, নির্মেদ কথন, দারুণ নির্মাণশৈলী আর অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ‍্য- সব মিলিয়েই কালোত্তীর্ণ সিনেমার সব রসদই যে আছে সিনেমাটিতে।

আর সিনেমার শেষে ‘বড় প্রেম কবল কাছেই টানেনা, দূরেও ঠেলে দেয়’- এই আপ্ত বাক‍্যকে সত‍্য প্রমাণ করা পরিণতি ‘কাসাব্লাঙ্কা’কে যেন তুলে ধরে এক অনন‍্য উচ্চতায়।

০১. ব্রিফ এনকাউন্টার: সব প্রেমই কী পরিণতি পায়? কিছু প্রেম ছোটগল্পের মতো। ‘শেষ হইয়াও’ যারা শেষ হতে চায় না। আর এই অসম্পূর্ণতাতেই যেন তাদের মাহাত্ম।

ঠিক এরকমই এক গল্প ‘বি্রফ এনকাউন্টার’-এর। ট্রেন যাত্রায় এক নিষিদ্ধ আকর্ষণের টানে যে প্রেমের শুরু, তা শেষও হয়ে যায় ট্রেনের হুইসেলের সঙ্গে সঙ্গে।

হলিউডের সবচেয়ে বিখ‍্যাত ক্লাসিক রোমান্টিক এই সিনেমায় ক্ষণিকের প্রেমিক-যুগলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সিলিয়া জনসন এবং ট্রেভর হাওয়ার্ড। ক‍্যামেরার পেছনে ছিলেন ডেভিড লিন।



মন্তব্য চালু নেই