বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী অভিনেতা শাহরুখের আয়ের উৎস

টম ক্রুজ, টম হ্যাঙ্কসের মতো হলিউডের সুপারস্টারদের পেছনে ফেলে তিনিই বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী অভিনেতা। ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সম্পদের মালিক তিনি। আর এ অর্থ তিনি কেবল অভিনয়ের বলেই উপার্জন করেননি। অভিনয় ছাড়াও আরও নয়টি উপায়ে অর্থোপার্জন করেন শাহরুখ। নায়ক থেকে প্রযোজক, অতঃপর পরিবেশক।

হিন্দি সিনেমার শীর্ষ অভিনেতাদের একজন শাহরুখ খান তার রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে অনেকদিন ধরেই সিনেমা প্রযোজনা করছেন। ‘ম্যায় হু না’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ আর ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর মতো ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা প্রযোজনা করেছে শাহরুখের এই প্রতিষ্ঠান। এবার রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে পরিববেশকও বনে গেছেন শাহরুখ। রোহিত শেঠির নির্দেশনায় কাজলের বিপরীতে নিজের নতুন সিনেমা ‘দিলওয়ালে’র পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়ে এর মধ্যেই গোটা ভারত থেকে ২৮০ কোটি রুপি সংগ্রহ করে নিয়েছেন তিনি।

আইপিএল থেকে সিপিএল: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ। কোটি কোটি রুপির ব্যবসা কিং খানের ঝুলিতে পুরেছে কেকেআর। আর তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই হয়তো এবার ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, অর্থাৎ সিপিএল- এ জুহি চাওলা ও তার স্বামীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় কিনে নিয়েছেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ফ্র্যাঞ্চাইজি।

সিপিএল কিন্তু জনপ্রিয় হলিউডি তারকাদের মধ্যেও। মার্ক ওয়ালবার্গ এবং জেরার্ড বাটলার যথাক্রমে বারবাডোজ ট্রাইডেন্ট এবং জ্যামাইকা টালাওয়াজের মালিক। এই দুই দলের অধিনায়ক দুই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান কাইরন পোলার্ড এবং ক্রিস গ্রেইল।

সিনেমার প্রচার থেকেও আয়: আজকের দুনিয়ায়, যেখানে সিনেমা তৈরির থেকে এর প্রচারের পেছনে প্রযোজকদের বরাদ্দটা থাকে বেশি, সেখান থেকে শাহরুখ দু পয়সা কামাবেন না তা কি হয়! ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর প্রচারে অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করে অর্থ আয়ের নতুন এক ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছিলেন তিনি।

সাধারণত সিনেমার প্রচারে ফটোশুট এবং গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ার পাশপাশি তারকা হাজির হন টিভি অনুষ্ঠান এবং রিয়ালিটি শো গুলোতে। তবে বুদ্ধিমান শাহরুখ এসবের পেছনে টাকা খরচ না করে সিনেমাটির কলাকুশলী দিপিকা পাড়ুকোণ, অভিষেক বচ্চন আর বোমান ইরানিদের নিয়ে বিশ্বব্যাপি ‘স্ল্যাম! দ্য ট্যুর’ নামের কনসার্টের আয়োজন করেন। বড় বড় শহরে এসব কনসার্টের মাধ্যমে রথ দেখা, আর কলা বেচা- দুটোই হয়েছিল শাহরুখের। প্রতিটি কনসার্ট থেকে শাহরুখের আয় ছিল ৭ কোটি রুপির বেশি।

দূতিয়ালির রাজা: ভারতের বিজ্ঞাপন দুনিয়ায় রূপালি পর্দার থেকেও বেশি দাপট শাহরুখের। কোমল পানীয় থেকে শুরু করে ট্যালকম পাউডার, গাড়ি থেকে রং ফর্সা করার ক্রিম – সব কিছুর দূতিয়ালিই অর্থের বিনিময়ে হাসিমুখে করে দেন শাহরুখ। সম্প্রতি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, একটি মশলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০ কোটি রুপির চুক্তি হয়েছে শাহরুখের। গুজব সত্যি হলে, এটিই হবে কেনো হিন্দি সিনেমার তারকার সবচেয়ে দামি বিজ্ঞাপনী চুক্তির রেকর্ড।

স্যাটেলাইট স্বত্ব বিক্রি: শাহরুখ জানেন, ভারত এবং ভারতের বাইরেও এমন অনেক দর্শক আছেন, যারা সরাসরি হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ পান না। তাদের কথা মাথায় রেখেই সিনেমার স্যাটেলাইট স্বত্ব চড়া দামে বিক্রি করেন তিনি। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমার স্বত্ব তিনি ৬৮ কোটি রুপিতে বিক্রি করেছিলেন জি সিনেমার কাছে। শুধু তাই নয়, শর্ত ছিল, সিনেমাটি যদি একশ কোটির বেশি আয় করে, তবে আরও বেশি অর্থ জি সিনেমাতে গুনতে হবে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ তাদের চ্যানেলে প্রদর্শনের জন্য। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এমন শর্তে স্যাটেলাইট স্বত্ব বিক্রির ঘটনা ছিল এটাই প্রথম।

সিনেমার লভ্যাংশে অংশীদারীত্ব: এখনকার প্রায় সব বড় তারকারাই সিনেমা হিট হলে লভ্যাংশ্যের বড় একটি অংশ নিজেদের জন্য দাবি করেন। এই প্রথার সূচনাকারীদের একজন হলেন শাহরুখ। জানা যায়, ‘ধুম থ্রি’র সাফল্যের জন্য ইয়াশ রাজ ফিল্মসের কাছ থেকে এর লভ্যাংশের ৩৩ শতাংশ দাবি করেছিলেন আমির খান। সিনেমাপ্রতি লভ্যাংশের দাবি শাহরুখের আরও বেশি; ভিশাল ভারাদওয়াজের এক সিনেমার জন্য লভ্যাংশের ৬০ শতাংশই নাকি দাবি করেছেন তিনি।

অভিনব ব্যবসায়িক কৌশল: প্রতিবারই সিনেমা মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবসার গতি বাড়িয়ে চলেন শাহরুখ। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ মুক্তি পাওয়ার পর দিল্লীতে একবার দুটি টিকেট কিনলে একটি টিকেট বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ওদিকে টিকেটপ্রতি দাম মাত্র দশ শতাংশ বাড়িয়ে বিশাল অঙ্কের লাভ করেছিলেন তিনি।

কৌশলী বিনিয়োগ: সিনেমা আর ক্রিকেটে তো বটেই শাহরুখ খানের কৌশলী বিনিযোগের উদাহরণ দেখা যায় অন্যান্য ক্ষেত্রেও। কিডজেনিয়া নামের বিশ্বব্যাপি সমাদৃত শিশুদের জন্য গড়ে তোলা এক ইনডোর চেইন থিমপার্কের ভারতীয় অংশীদার ইমাজিনেশন এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডিয়াতেও বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন শাহরুখ।

বিয়ের আসরের নাচিয়ে: অনেকের কাছেই হয়তো অবিশ্বাস্য শোনাবে, কিন্তু এত বৈভবের পরও চড়া পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিয়েতে নাচেন শাহরুখ। বিয়েতে কেবল নিজের উপস্থিতির জন্য ১৫ হাজার ডলার নিয়ে থাকেন শাহরুখ। আর তার পুরো একটি নাচের জন্য গুনতে হয় পাক্কা আট কোটি রুপি। সম্প্রতি দুবাইয়ে এমনই এক ব্যায়বহুল বিয়েতে পুরো আধ ঘণ্টা নেচে শিরোনামে এসেছিলেন শাহরুখ।

অনেক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছেন, এই ক্ষেত্রে নিজের একাধিপত্যের বিষয়টা উপভোগই করেন তিনি। কারণ, শারীরিক অবস্থার জন্য নাচানাচির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে সালমান খানের। ওদিকে সাইফ আলি খান এবং আমির খান বিয়েতে নাচার ব্যাপারে নারাজ। আর তাই খানদের মধ্যে এক শাহরুখের কাছেই আসতে হয় সবাইকে, যারা নিজের বিয়েতে তারকার জৌলুস চান। মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১২ সালে এরকম প্রায় আড়াইশ বিয়েতে নাচার প্রস্তাব এসেছিল শাহরুখের কাছে। এর মধ্যে মাত্র দশটিতে নেচেছেন তিনি। অর্থাৎ, কেবল এই খাত থেকেই সে বছর ৮০ কোটি রুপি আয় করেছিলেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই