বিশ্বকাপের ‘বিস্ফোরক’ সাকিব

সাকিব এবার এমন রেকর্ড নিয়ে বিশ্বকাপে খেলছেন, যে রেকর্ড ক্রিকেট ইতিহাসে আর কারো নেই! বর্তমানে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের আগে কোনো ক্রিকেটারই এমন কীর্তি গড়তে পারেননি!

মাগুরার ছেলে সাকিবের বাংলাদেশ জাতীয় দলে যাত্রা শুরু ২০০৬ সালে। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক তার। প্রথম ম্যাচেই অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখান তিনি। ১০ ওভার বল করে ১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি, ব্যাট হাতে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটের জয় তুলে দেন সাকিব। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।

সেই ২০০৬-এর অভিষেকের পর থেকে এখন ২০১৫ সাল। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, তিন ফরম্যাটেই দাপটের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন সাকিব। ইতিমধ্যে ক্রিকেটে বেশ কিছু অনন্য রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন এই অলরাউন্ডার।

সাকিব দেশের ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি বিদেশেও নিজেকে এক নামে চিনিয়েছেন। ভারতের আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল ও ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের মতো বড় বড় টুর্নামেন্ট মাতিয়েছেন এই বেঙ্গল টাইগার। স্পিন ঘূর্ণিতেও বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানকে করে দিয়েছেন দিশেহারা। অবলীলায় আলো ছড়িয়েছেন ব্যাট হাতেও।

কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দুইবার আইপিএলের শিরোপা জেতাতে ব্যাট-বলে দারুণ অবদান রাখেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএলে তো মাত্র ৬ রানে ৬ উইকেট নেওয়ার অনন্য কৃতিত্ব দেখান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ঘরোয়া লিগ বিগ-ব্যাশেও দুই মৌসুমে খেলেছেন।

বিগ-ব্যাশে প্রথমবার অ্যাডিলেড স্টাইকার্সের হয়ে এবং পরের বার অর্থাৎ, এ বছর মেলবোর্ন রেনেগেডসের জার্সিতে খেলেছেন সাকিব। গত মাসে শেষ হওয়া বিগ-ব্যাশে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে চারটি ম্যাচ খেলেন তিনি। এতে ব্যাটে-বলে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশের এই সেরা ক্রিকেটার।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের নাম এখন সাকিব। দেশের গর্ব এই সাকিবকে নিয়েই বুধবার বিশ্বকাপের ১১তম আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টাইগারদের প্রতিপক্ষ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া আফগানিস্তান। বিশ্বমঞ্চে আফগানদের হারিয়ে শুভসূচনা করতে চায় বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে সাকিবের দিকেই নজর বেশি থাকবে গোটা বাংলাদেশের। দলের কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহেও চান, সাকিব যেন বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিগ-ব্যাশে খেলে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়েও নিয়েছেন সাকিব। ফলে বিশ্বকাপে ‘বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান’ ও ‘চতুর বোলার’ সাকিবের কাছ থেকে সেরাটাই চান বাংলাদেশের লঙ্কান কোচ হাথুরুসিংহে।

হাথুরুসিংহের ভাষায়, ‘আমাদের বেশ কিছু বিশ্বসেরা খেলোয়াড় রয়েছে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের এক নম্বর অলরাউন্ডারও আমাদের দলে আছে। আশা করছি, সাকিব পারফর্ম করবে এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। আপনারা মেলবোর্ন রেনেগেডসে তার খেলা দেখেছেন। সে একজন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান, যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। সেই সঙ্গে সে খুবই চতুর বোলারও।’

এবার তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন সাকিব। এ ছাড়া তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমও নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে বেশি ম্যাচও খেলেছেন এই তিনজন। সাকিব-তামিম-মুশফিক তিনজনই ১৫টি করে ম্যাচ খেলেছেন। এই ১৫ ম্যাচে সাকিব করেছেন ৩৪৪ রান এবং উইকেট নিয়েছেন ১৫টি। আর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলেছেন সাকিব ও তামিম, ৯টি করে। এতে সাকিবের রান ১২৮ এবং উইকেট ১২টি।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে সাকিবের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্সের প্রত্যাশাটাও বেশি। বিশ্বমঞ্চ মাতাতে সাকিবও প্রস্তুত। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই আসরে সাকিব কতটা ঝলক দেখাতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়!



মন্তব্য চালু নেই