বিমান যেন সময় ধরে চলে: প্রধানমন্ত্রী

চার বছর পর নতুন উড়োজাহাজ দিয়ে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থাটিতে সময়সূচি ধরে চলতে বলেছেন। ফ্লাইট সূচি ধরে রাখতে মাঝে-মধ্যেই হিমশিম খাওয়া বিমানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিমান নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাবে, নির্দিষ্ট সময়ে আসবে; তা নিশ্চিত করতে পারলে সুনাম বৃদ্ধি পাবে।”

রোববার শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুট এবং সংস্থার বহরে সংযোজিত দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ উদ্বোধন করেন।

কানাডার তৈরি ৭৪ আসনের ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ দুটির নাম প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন মেঘদূত ও ময়ূরপঙ্খী।

আগামী ৬ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশালে পথে উড়বে নতুন এই দুটি উড়োজাহাজ।

ভাড়ায় আনা ড্যাশ-৮ দুটি নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা এখন ১২টি। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি এয়ারবাস এ ৩১০, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ।

চারটি ৭৭৭-৩০০ ইআরের নাম পালকী, রাঙাপ্রভাত, অরুণআলো ও আকাশপ্রদীপ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বিমানের যাত্রী সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদও দেন।

“গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মান উন্নত করা দরকার। সেই ক্ষেত্রে আমরা যদি দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে পার্টনার খোঁজা দরকার। বিমানকে আন্তর্জাতিক মানের করতে হলে সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।”

উড়োজাহাজের অভাবে কয়েক বছর ধরে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটগুলো বন্ধ। সর্বশেষ ২০১১ সালে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কক্সবাজারে ছয়টি, যশোরে পাঁচটি, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে তিনটি এবং বরিশালে দুটি করে ফ্লাইট চালানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর এবং কক্সবাজারের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি বিমানের কার্গো ব্যবস্থা চালু এবং সৈয়দপুর ও কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার কথাও বলেন।

পণ্য পরিবহনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানকে লাভজনক করতে হলে কার্গো ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে কার্গো ছাড়া শুধু যাত্রী টেনে লাভজনক হওয়া সম্ভব না।”

ভুটানের এবং উত্তরবঙ্গে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

“পর্যটন নগরী হিসাবে কক্সবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা হলে শুধু পর্যটকরাই ব্যবহার করতে পারবে না। পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে যাওয়ার সময় বিমান কক্সবাজারে রি-ফুয়েলিংও করতে পারবে।”

বাগেরহাটে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধি, বিমানবন্দরের রানওয়ের উন্নয়ন, পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় টার্মিনাল ও দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হচ্ছে বলেও জানান।

বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে চলতি বছরের মধ্যে আরও দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব খুরশীদ আলম চৌধুরী, বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন এবং বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকতা কাইল হাওয়ার্ড বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কেক কাটার পর নতুন উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শন করেন।

বিমান কর্মকর্তারা জানান, স্বল্প দূরত্বে ফ্লাইট চালানোর জন্য ড্যাশ-৮, এটিআর-৭২ এর মতো টার্বো-প্রপেলার উড়োজাহাজগুলো বেশি উপযোগী। রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় এসব উড়োজাহাজ অর্থনৈতিকভাবেও বেশি লাভজনক।

বাংলাদেশের চারটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালালেও টিকিটের মূল্য ও সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই