বিমানের ককপিটের দরজা যেভাবে কাজ করে

আধুনিক ককপিট দরজাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী। তবে জরুরি প্রয়োজনে পাইলটকে সহায়তা করতে সেগুলো বাইরে থেকে খোলা সম্ভব। সমস্যা হচ্ছে, দরজার মূল লক থাকে ভেতরে, যা বিপজ্জনকও। গত ২৪ মার্চ ফ্রান্সের আল্পসে জার্মানউইংসের একটি বিমান বিধ্বস্তের পর ককপিটের দরজা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার ঘটনার পর ককপিটের দরজা আরো মজবুত ও শক্তিশালী করে বিমান নির্মাতারা। উদ্দেশ্য, বিমানটি কেউ অপহরণ করার চেষ্টা করলে যাতে ককপিটে ঢুকতে না পারে। আর পাইলটের অনুমতি ছাড়া যাতে সেটি কোনোভাবে খোলাও না যায়। এমনকি কেবিন থেকে সেটি খোলার কোড থাকলেও পাইলট চাইলে সেই কোড অকার্যকর করতে পারেন সামান্য একটি সুইচ টিপে। চলুন জানা যাক, এই দরজা ঠিক কিভাবে কাজ করে।

এক্সেস কোডসহ ইলেকট্রনিক লক
টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার এক বছর পর ককপিটের নতুন দরজা বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে এয়ারবাস। এতে দেখা যাচ্ছে, ককপিটের দরজায় মূলত পাঁচটি উপাদানের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এতে রয়েছে বুলেটপ্রুফ পাত এবং তিনটি ইলেকট্রনিক খিল। দরজার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছেন পাইলটরা তা দেখতে পারেন। আছে একটি ভিডিও ক্যামেরা, যা দরজার সামনের এলাকা এবং যাত্রীদের চলাফেরার দিকে নজর রাখতে পাইলটকে সহায়তা করে। ককপিটের কন্ট্রোল প্যানেলেই একটি লিভার রয়েছে যা ব্যবহার করে দরজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন পাইলট। আর সেই লিভারে থাকা সেটিংসগুলো হচ্ছে নর্ম, লক এবং আনলক। পাশাপাশি ককপিটের বাইরের অংশ অর্থাৎ কেবিন এলাকায় রয়েছে একটি কিবোর্ড। এই বোর্ডে সবুজ এবং লাল বাতি থাকে। থাকে টেলিফোন যা ব্যবহার করে ক্রুরা পাইলটের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

অনুপ্রবেশকারীদের রোখার ব্যবস্থা
সাধারণত দু’জন পাইলট ককপিটের মধ্যে থাকেন এবং দরজাটি বন্ধ থাকে। এটি বাইরে থেকে খোলা যায়না, কারণ দরজায় কোনো হাতল নেই। তবে সাধারণ অবস্থায় দরজা থাকে নর্ম মোডে, যার অর্থ ইলেকট্রিক খিলগুলো সক্রিয় নেই। কেবিন ক্রুরা ককপিটে যেতে চাইলে সাধারণত পাইলটকে ফোন করেন। পাইলট তখন লিভারটি টেনে দরজা আনলক করে দেন। এর বাইরে কেউ যদি দরজায় নক করেন কিংবা ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করেন, তখন পাইলট সেটিকে সন্দেহভাজন আচরণ মনে করে। সেরকম পরিস্থিতিতে পাইলট দরজার লিভার টেনে সেটিকে পুরোপুরি লক করে দেন। আর তখন কেবিন থেকে দরজা জোর করে খোলা কার্যত অসম্ভব হয়ে যায়।

জরুরি অবস্থায় যা করা যায়
যে-কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় দরজা খুলতে কেবিন ক্রুদের কাছে একটি কোড থাকে। পাইলটের যদি জরুরি সাহায্য প্রয়োজন হয়, যেমন তারা যদি বেহুশ হয়ে পড়েন কিংবা কোনরকম গ্যাস বিষের শিকার হন, তখন এই ব্যবস্থায় দরজা খোলা সম্ভব। তবে এখানেও কিন্তু রয়েছে। কেবিন ক্রু বাইরে থেকে এই কোড দেয়ার পর পাইলটের সামনে কন্ট্রোল প্যানেলে একটি ওপেন বোতাম জ্বলতে থাকে। আর ককপিটে তখন এমার্জেন্সি এলার্ম বাজতে থাকে। ত্রিশ সেকেন্ড পর্যন্ত পাইলট যদি সাড়া না দেন, তখন দরজাটি মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের জন্য খুলে যায়।

কিন্তু পাইলট যদি মনে করেন, বিমান হাইজ্যাক হয়েছে এবং হাইজ্যাকাররা জোর করে কেবিন ক্রুদের দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করছে, তখন তিনি সেই ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে দরজার লক ফাংশন অন করে দিতে পারেন। আর তখন, এয়ারবাসের ভিডিও অনুযায়ী, পরবর্তী পাঁচ মিনিটের জন্য দরজা পুরোপুরি লক হয়ে যাবে। তবে একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্তমানে পাঁচ মিনিট নয়, এধরনের পরিস্থিতিতে বিশ মিনিট দরজা বন্ধ থাকে। তবে আরেকটি পরিস্থিতিতে দরজা নিজে থেকে খুলে যেতে পারে। যদি ককপিটের এয়ার প্রেসার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়, তাহলে। ককপিটের উপরে প্রেসার মাপার একটি সেন্সর রয়েছে। সেই সেন্সর বিষয়টি শনাক্ত করতে পারে। কিন্তু এই নিয়ম সেই ‘বিশ মিনিটের’ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে



মন্তব্য চালু নেই