বিপিএলে গেইল-সাকিবদের মূল্য কত?

বিপিএল ধামাকা শুরু হয়ে গেছে বেশ আগে। ঘরোয়া ক্রিকেটের জমজমাট এই আসর মাঠে গড়ানোর সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তত বাড়ছে এর উত্তেজনা। তাতে আবার ভিন্ন মাত্রা যোগ করছে ক্রিকেটারদের নিলাম, মূল্য এবং তাদের নিয়ে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর টানাটানি।

ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে টি২০ ক্রিকেটের বেশ কয়েকজন নামি-দামি তারকা অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। গেইল, আফ্রিদি, সাঙ্গাকারা, দিলশান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানরা তো রয়েছেনই। জানা গেছে বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ২৩জনকে নিশ্চিত করে ফেলেছে ফ্রাঞ্চাইজিরা।

ক্রিস গেইল থেকে শুরু করে বড় বড় রথি-মহারথিরা যে বিপিএলে নাম লেখাচ্ছেন, এর আড়ালে একটি প্রশ্নও কিন্তু বেশ ঘুরপাক খাচ্ছে। বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করেছে ৭০ হাজার ডলার। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এত কম টাকায় কি সত্যি সত্যি গেইলরা আসবেন বাংলাদেশে খেলতে? বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানদেরও কি মূল্য এত কম?

এসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে বুধবার। বিপিএল গভর্নিং কমিটি মনে করছে, সত্যি সত্যি ক্রিস গেইল, সাকিব আল হাসান কিংবা শহিদ আফ্রিদিদের জন্য মূল্যটা অনেক কম হয়ে গেছে। বেধে দেয়া এই মূল্যের চেয়ে আরও অনেক বেশি অর্থ পাওয়ার যোগ্য কিংবা আরও বেশি অর্থ দিয়েই তাদের বিপিএলে খেলতে আনতে হবে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) সামনে রেখে প্লেয়ার বাই চয়েস অনুষ্ঠিত হবে ২৬ অক্টোবর। তার আগেই অবশ্য বেশকিছু বিদেশি তারকা ক্রিকেটাকে নিশ্চিত করে ফেলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এমনকি এদের প্রত্যেকেরই পারিশ্রমিকের অংক ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিপিএলের বেধে দেয়া ৭০ হাজার ডলারের সীমাও।

এমনিতেই দেশি ক্রিকেটারদের চেয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের অংকটা বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। তবুও না কি আনা যাচ্ছে না টি২০ ফরম্যাটের মারকাটারি ব্যাটসম্যান-অলরাউন্ডারদের। তাই বাড়তি অর্থ খরচের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে।

বিপিএল শুরু না হতেই অর্থের এমন ঝনঝনানিতে আপত্তিতো নেই, বরং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল একে দেখছেন নিজেদের সাফল্য হিসেবেই। তারা মনে করছে, মাঠে গড়ানোর আগে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে এই যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা, সেটা বিপিএলকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে। তবে তারা এটাও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রেখেছে যে, বেধে দেয়া সীমার বাইরে প্রতিশ্রুত অর্থের ব্যাপারে দেশি কিংবা বিদেশি কোনো ক্রিকেটারেরই টাকা পরিশোধের দায়িত্ব নেবে না বিসিবি।

বিপিএলকে উপভোগ্য এবং আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বিদেশি ক্রিটোরদের বেধে দেয়া অর্থের ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা শিথিল করছে বিপিএল কমিটি। এরইমধ্যে ফ্যাঞ্চইজিরা বিদেশি ক্রিটোরদের বেধে দেয়া সীমার চেয়ে বেশি দিয়ে তাদের দলে ভেড়াচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিপিএলের গভির্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক।

চারটি ক্যাটাগরিতে এবারের বিপিএলে বিদেশী ক্রিকেটাররা খেলবেন। বিসিবির নির্ধারিত সীমার মধ্যে- ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পাবেন ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, ‘বি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা ৫০ হাজার, ‘সি’ ক্যাটাগরির ৪০ হাজার এবং ‘ডি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পাবেন ৩০ হাজার মার্কিন ডলার করে।

তবে এর বাইরেও বেশিদামে বিদেশি ক্রিকেটারদের দলে ভেড়ানো প্রসঙ্গে মল্লিক বলেন, ‘আমাদের টুর্নামেন্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য এ সুযোগটা দিতেই হতো। আফ্রিদি, গেইল, মালিকের মত ক্রিকেটাররা ৭০ হাজার ডলারে আসতে চাইত না। এসব ক্রিকেটার আমাদের তালিকায় থাকলে ৭০ হাজারের বেশি পেত না। কিন্তু ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি যখন ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করছে তাদের সাথে, তখন তো দাম বাড়বেই। গেইলকে নিতে যেমন ৪টি ফ্র্যাঞ্চাইজি যোগাযোগ করেছে, তাহলে সে তো বেশি চাইবেই।’

গেইল, আফ্রিদিরা বেধে দেয়া মূল্যের চেয়েও যদি বেশি পেয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানেরও বেশি পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন ইসমাইল হায়দার মল্লিক। দেশি আইকন ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব পাবেন বেধে দেয়া সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা। তবে গেইল ও আফ্রিদির মানুযায়ী সাকিবের মান কিন্তু মোটেও কম নয়। তাই দেশীয় ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়েও বেশি পেতে পারেন সাকিব, বলে জানালেন বিপিএল গভির্নিং কাউন্সিল কমিটির সদস্য সচিব।

এ বিয়সে তিনি বলেন, ‘সাকিবের হয়ত আরও বেশি টাকা প্রাপ্য; কিন্তু বাকি ৫ আইকনকে আমি কত টাকা দেব? আমাদের আইকন ক্রিকেটারদের স্ট্যান্ডার্ড অবশ্যই বিদেশীদের চেয়ে কম না। তবে আমরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। টুর্নামেন্টটা টিকে থাকার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে।’

দেশীয় ক্রিকেটাররা ঘরোয়া লিগের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাবে বলেই দাবি বিপিএল সদস্য সচিবের। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টকে টিকে থাকতে হলে এই টাকাটা বেশি করা কঠিন। এখন বিদেশি ক্রিকেটার আনতে হলে একটু বেশি টাকা দিতেই হবে। আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটাররা প্রিমিয়ার লিগে কত টাকায় খেলে? এরকমই পাবেন এখানে। তবে আমরা সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে অবশ্যই বাড়াব। ডেকে এনে টাকা না দেওয়ার চেয়ে, টাকা কমিয়ে পুরোটা দিয়ে দেওয়া অনেক ভালো। সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে চেয়েছি। দেশের সবকটি ক্রিকেটারই কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে বেশি পাচ্ছে বিপিএলে। আমরা তো জানি প্রিমিয়ারে ওরা কত পায়।’

বিদেশিদের বেশি অর্থ দেয়া হলে, অতিরিক্ত অর্থের দায় নেবে না বিসিবি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলগুলি সরাসরি ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি করলে ৭০ হাজার ডলারের বেশি কারও পারিশ্রামিকের দায়িত্ব আমরা নেব না। তবে চুক্তির অঙ্ক অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। না হলে ট্যাক্স কিভাবে দেবে? চুক্তিপত্রের এক কপি বোর্ডে এবং আরেক কপি এনবিআরে পাঠাতে হবে।’

এরপরও দলগুলোর খরচ বাড়বে না বলেই মনে করছেন বিপিএলের সদস্য সচিব, ‘দলগুলির খরচ কোনোমতেই ৭ কোটি টাকার বেশি হবে না। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আমরা বলে দিয়েছি যে, ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকা খরচ করতে।’

প্রতিটি দলে সর্বোচ্চ ১২ জন বিদেশি ক্রিকেটার রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন এবং একাদশে থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ৪ জন।



মন্তব্য চালু নেই