বিপদ দেখলে বিশেষ সংকেত দেয় হাতি
নবাদাড়ে ঘুরতে গিয়ে ভয় পেয়ে মানুষ যেমন চিৎকার করে ওঠে ‘ভাল্লুক! ভাল্লুক!’ ঠিক তেমনি মানুষের ভয়ে ভীত হাতির পালও চিৎকার করে উঠতে পারে ‘মানুষ! মানুষ!’ বলে। বিষয়টা ভাবতে একটু খটকা লাগলেও এমনটাই সত্য বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে হাতিরা মানুষের ভাষায় মানুষকে ‘মানুষ’ না বলুক ‘মানুষের উপস্থিতি’ বোঝাতে ওদের নিজেদের বিশেষ ‘সতর্কসংকেত’ আছে। আর মানুষের উপস্থিতি টের পেলে হাতির পাল ওই সংকেতেই কাছে-দূরের অন্যান্য হাতিকে সতর্ক করে দেয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে হাফিংটন পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সেভ দ্য এলিফ্যান্টস এবং ডিজনিস অ্যানিমেল কিংডমের পরিচালিত এক যৌথ গবেষণার পর প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের উপস্থিতি বোঝানোর জন্য হাতিরা বিশেষভাবে ‘নিচু স্বরে ডেকে’ অন্য হাতিদের এই সতর্কসংকেত দিয়ে থাকে। অন্য হাতিগুলো স্বজাতির এই সতর্কসংকেত বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে।
উত্তর-কেনিয়ার সাম্বুরু নৃ-গোষ্ঠীর মানুষজনের কোলাহল ও বাদ্যযন্ত্রের শব্দ ধারণ করে সেখানকার আফ্রিকান হাতিদের লক্ষ্য করে তা বাজিয়ে শোনান গবেষকেরা। দেখা গেছে, এই শব্দের প্রতিক্রিয়ায় হাতিরা যেভাবে নিচু স্বরে ডেকে ওঠে, তা অন্যান্য হাতিও বুঝতে পারে এবং নিরাপদে যাওয়ার জন্য তৎপর হয়। গবেষকেরা এটাও দেখেছেন যে হাতির এই ডাক অন্যান্য সময়ের ডাকের চেয়ে ভিন্ন।
গবেষকেরা হাতির এই বিশেষ নিচু স্বরের ডাক ধারণ করেন এবং অন্যান্য হাতির পালের কাছে এই শব্দ বাজান। এতে দেখা যায়, অন্য হাতিরাও এই ডাকে একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ‘ধারে-কাছেই মানুষ আছে ভেবে’ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটে।
গবেষক দলটির সদস্য ড. লুসি কিং বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, হাতির এই ডাক দৌড়ে পালানোর সময়ে ওদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ এবং অন্য হাতিরাও এটা বুঝতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, আবার এটাও হতে পারে যে হাতিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই মানুষের উপস্থিতির সুনির্দিষ্ট হুমকি বোঝাতেই এটা করে থাকে। আমাদের গবেষণার ফলে আরও দেখা গেছে, আফ্রিকান হাতিরা দুই ধরনের ডাক আলাদা করতে পারে এবং এই সতর্কসংকেত কতটা জরুরি তা-ও আলাদা করতে পারে।
২০১০ সালের অন্য এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছিলেন, মৌমাছির উপস্থিতি টের পেলে হাতিরা একটি বিশেষ সতর্কসংকেত দিয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে ছুটে পালায়। এখন নতুন এই গবেষণায় পাওয়া গেল ‘মানুষের উপস্থিতি’র সতর্কসংকেত। এ থেকে বিজ্ঞানীরা এও ধারণা করছেন যে, যতটা ভাবা হয় হাতিরা তার চেয়েও শক্তিশালী ‘শাব্দিক যোগাযোগে’ সক্ষম। বিষয়টা এমন, আমাদের ভাষায় আমরা যেমন স্বরবর্ণের একটু সামান্য পরিবর্তন করেই ভিন্ন অর্থ নির্দেশ করতে পারি, হাতিরাও স্বরের সামান্য তারতম্য করে ভিন্ন অর্থ নির্দেশ করতে পারে।
মানুষের বসতি সম্প্রসারণ, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং হাতির দাঁতের বিপুল বাণিজ্যের জন্য ব্যাপক হারে শিকারের কারণে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে আফ্রিকান হাতি।
মন্তব্য চালু নেই