বিদ্যুৎ নিয়ে আবারও উদ্বেগ বাড়ছে সরকারের
দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি ও হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েও বিদ্যুৎ খাতের সফলতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন উদযাপন করলেও কমছে না লোডশেডিং। যদিও এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে শূন্য লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে আবারও উদ্বেগ বাড়ছে সরকারের। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যর্থতা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনিশ্চয়তা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রভাবেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানা যায়, বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট। কিন্তু সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের চাহিদাই পূরণ করা যাচ্ছে না। ভারত থেকে আমদানিসহ গতকাল দিনে উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ২৫ মেগাওয়াট। আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় উৎপাদন হয় সাত হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বরাদ দিয়ে দৈনিক বণিক বার্তা জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে ৮১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ আছে ১ হাজার ৮৪৮ মেগাওয়াট উৎপাদন। এর মধ্যে মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট অন্যতম। ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৩০০-৩৫০ মেগাওয়াট। তাছাড়া স্বাভাবিকভাবেই সক্ষমতার চেয়ে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়। এতেই চলে যায় আরও দুই হাজার মেগাওয়াট। এ কারণে সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াটের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের মাঝেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসতে আরও কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে। গ্যাসভিত্তিক বড় কেন্দ্রগুলোও সময়মতো উৎপাদনে আসতে পারছে না। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাতে পারছে না সরকার। মেয়াদ শেষে এরই মধ্যে নয়টি রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া এসব কেন্দ্র করা হয়েছে সন্ধ্যাকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (পিকিং প্লান্ট) ব্যবহার করার জন্য। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসব কেন্দ্রকে এখন দিন-রাত চালানো হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভ্রান্ত পরিকল্পনার কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। এমনকি উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন করেনি সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা। সরকারের গত মেয়াদের পাঁচ বছরে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। একই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে ৬২ শতাংশ। অথচ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন বেড়েছে যথাক্রমে ১৭ ও ১১ শতাংশ। ওভারলোডেড সিস্টেমের কারণে বেড়ে গেছে সিস্টেম লস।
মন্তব্য চালু নেই