বিদেশি জঙ্গির সঙ্গে গোপন বৈঠকেই ছিলেন বদি

জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের বিভিন্ন অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এবার জঙ্গিদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ। বদি অস্বীকার করলেও অভিযানে অংশ নেয়া বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী বলছেন, ‘বৈঠক থেকে সৌদি নাগরিকসহ চার জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য বদি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।’

শনিবার (৩০ জুলাই) টেকনাফের বাহারছড়ায় এক সৌদি নাগরিকসহ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন ‘বৈঠক করে’ নতুন বিতর্কে জড়ান এ সাংসদ। গোপন খবরের ভিত্তিতে বৈঠকে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আওয়ামী লীগের এই এমপি জঙ্গিদের আটক না করার অনুরোধও জানিয়েছিলেন বলে জানান বিজিবি উপাধিনায়ক।

তবে গোপন ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেন আবদুর রহমান বদি। তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই আমি।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, গোপন ওই বৈঠকে সংসদ সদস্য বদি টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বিয়াই জঙ্গি মৌলভী ছৈয়দ করিমের বাড়িতে চলছিল।

অভিযান পরিচালনাকারী বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন, বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতা হাফেজ ছালাউল ইসলাম, সৌদি নাগরিক আহম্মেদ আল গাম্বীসহ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিয়াই মৌলভী ছৈয়দ করিম উপস্থিত ছিলেন।

আটকরা হলেন- রোহিঙ্গা বিছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাজেশনের (আরএসও) সামরিক বিভাগের প্রধান কক্সবাজারের ঝিংলজা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়া মাদরাসার পরিচালক ও মিয়ানমারের হাফেজ জিয়াউল হকের ছেলে হাফেজ ছালাউল ইসলাম, টেকনাফ বাহারছড়ার শামলাপুর পুরান পাড়ার মৃত হাজী মকবুল আলীর ছেলে হাফেজ ছৈয়দ করিম, টাঙ্গাইল জেলার বাশাইল থানার হাবাবিল পাড়ার মৃত আবদুল হামিদের ছেলে মাও. মো. ইব্রাহীম ও সৌদি নাগরিক আবু সালেহ আল আহম্মেদ গাম্মী।

শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে টেকনাফ উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া শামলাপুর গ্রামের মৃত হাজী মকবুল আলীর ছেলে ছৈয়দ করিমের বাড়িতে জঙ্গিদের গোপন বৈঠক থেকে এ অভিযান চালানো হয়। বিজিবির টেকনাফস্থ ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ ইকবাল, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই গৌতম রায় এ অভিযানে অংশ নেন।

বিজিবির টেকনাফস্থ ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানিয়েছেন, আটকদের বিজিবি ক্যাম্পে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার ( ৩১ জুলাই) প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যামে এ ব্যাপারে জানানো হবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, জিজ্ঞাসাবাদের পর আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ২১ মার্চ টেকনাফের হ্নীলার একটি মাদরাসায় গোপন বৈঠককালে রোহিঙ্গা জঙ্গি আরএসও নেতা সামরিক বিভাগের প্রধান হাফেজ ছালাউলকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে ৩ জন নিহতের ঘটনায় হাফেজ ছালাউলকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে বের হয়ে আবারও জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত রাখে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সরে আসেননি নিজের কর্মকাণ্ড থেকে।

সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান, তাদের নাগরিকত্ব দান, ভোটার তালিকায় নাম তোলা, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ তাদের নানাভাবে সহযোগিতাকারী রোহিঙ্গাবান্ধব ৫১ জন জনপ্রতিনিধির তালিকা করেন নির্বাচন কমিশন। ওই তালিকায় উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, টেকনাফের উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিনের নাম রয়েছে। এছাড়া এ ৪ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই