সাতক্ষীরার খবর

বিজিবির সুবেদারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে চোরাকারবারীরা

সাতক্ষীরার ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের ইনচার্জ সুবেদার নজরুল ইসলাম (৫৬) কে পিটিয়ে হত্যা করেছে চোরাকারবারীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন লক্ষিদাঁড়ী সীমান্তে ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থল থেকে পলাশ ও রনি মোল্যা নামের দুই চোরাকারবারীকে আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে সুবেদার নজরুল ইসলাম তার সহকর্মী সিপাহি বেল্লাল হোসেনকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেলযোগে সীমান্তের লক্ষীদাঁড়ি বেড়ি বাধ এলাকায় টহলে ছিলেন। এসময় কয়েকজন চোরাচালানি চোরাইপথে ভারতীয় পন্য নিয়ে আসছিল। বিজিবি সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া করলে চোরাকারবারীরা তার ওপর হামলা করে। এতে সুবেদার নজরুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ও বিবিজি সদস্যরা তাকে দ্রুত সাতক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মারুফ হাসান সুবেদার নজরুল ইসলামের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, তার গায়ে একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। BGB
নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার মাগুরডাঙ্গা গ্রামের আমীর আলীর ছেলে। তিনি পারিবারিক জীবনে ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক ছিলেন। স্থানীয়রা জানায়, ঘটনার সাথে জড়ীত থাকার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন পলাশ (৩২) ও একই উপজেলার বাটকেখালী গ্রামের তাবারক হোসেনের ছেলে রনি মোল্যা (২০) কে ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় জনতা আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তাদেরকে (বৃহস্প্রতিবার বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়নি বলে জানাগেছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ডিউটি অফিসার এস আই মালেক জানান, বিজিবির পক্ষ থেকে বিকাল পর্যন্ত কোন মামলা দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তা হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ২ জন আটক হয়েছে শুনেছি। কিন্তু তাদেরকে এখনও থানায় সোপর্দ করা হয়নি।
সাতক্ষীরা-৩৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর নজির আহম্মেদ বকশি নজরুল ইসলামের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও কি কারনে তাকে চোরকারবারীরা হত্যা করেছে সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত মুখ খুলেননি। তিনি বলেন, পরে প্রেসব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে।

নলতা ইউনিয়ন পরিষদে অর্থের বিনিময়ে বয়স বাড়ানো কমানোর অভিযোগ: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের পুরুষ উদ্যোক্তা অনুপ কুমার অভির বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরিষদের সচিবকে ম্যানেজ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ পরিবর্তন করে কারও বয়স কমানো ও কারও বয়স বাড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। একই সাথে জন্ম নিবন্ধন করতে আসা বা তথ্য কেন্দ্রে আসা ব্যাক্তিদের সাথে দূর্ব্যবহার ও হয়রানী করা হচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন সনদ
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের আব্দুর রশীদ সরদারের ছেলে মো. রাজু আলীর ২০০৭ সালের ৪ জুলাই নলতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইস্যুকৃত জন্ম সনদে জন্ম তারিখ দেয়া হয়েছে ১২/১২/২০০০। একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ইস্যুকৃত আরেকটি জন্ম সনদে তার জন্ম তারিখ দেয়া হয়েছে ১২/১২/২০০৭।
২০০৭ সালের ৮ জুলাই কালিগঞ্জ উপজেলার শিবপুর গ্রামের মো. ছামসুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলামের জন্ম সনদে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১ মার্চ ১৯৮৭। একই ব্যক্তির অনকুলে চলতি বছরের ৭ মে তারিখে আরেকটি জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়েছে সেখানে তার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১ মার্চ ১৯৯২।
একই উপজেলার ঘোনা গ্রামের মো. আবু বকর সিদ্দীক এর ছেলে মো. তৌহিদুল ইসলাম (রুমন) এর জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ লেখা আছে ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সাল। নলতা ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক প্রদানকৃত জন্ম সনদে তার বয়স লেখা হয়েছে ৬ সেপ্টম্বর ১৯৯২ সাল। অনেক মেয়েদের বিয়ের বয়স না হলেও তাদেরকে বয়স বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ভুয়া সনদ।
অথচ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে কর্মসুচি হাতে নেয় তার প্রথম কাজ ছিল সঠিক জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন করা। এবং সেটিকে ডিজিটালাইজড করা। সেখানে যাতে সব মানুষের জন্ম মৃত্যু তারিখটি সঠিকভাবে লিপিব্ধ থাকে।
এ বিষয়ে সরকার আইনও প্রণয়ন করেছে। ২০১৩ সনের ৩৪ নং আইন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত আইন অনুযায়ি যদি কোন ব্যক্তি জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন বা এমন কোন লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা প্রদান করেন, যাহা তিনি মিথ্যা বলিয়া জানেন বা বিশ্বাস করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে অথবা অনধিক ১ (এক) বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন’।
একই আইনে আরও বলা হয়েছে যদি কোন নিবন্ধক উপ-ধারা (২) এ উল্লেখিত মিথ্যা তথ্য, লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করেন তাহা হইলে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক অনধিক ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা
অর্থদন্ডে অথবা অনধিক এক বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে সক্ষম হন যে উক্ত অপরাধ তাঁহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে অথবা উক্ত অপরাধ রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।”
এ আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত ইউনিয়ন পরিষদ এর সচিব শহিদুল ইসলাম মৃধার সহযোগিতায় ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের পুরুষ উদ্যোক্তা অনুপ কুমার অভি প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটাচ্ছেন সেখানে। আর এসব কাজের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের দূর্বলতার সুযোগে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের পুরুষ উদ্যোক্তা অনুপ কুমার অভি বলেন, মেম্বর চেয়ারম্যানরা চাইলে আমাদেরকে বাধ্য হয়ে অনেক কিছু করতে হয়। এসবের জন্য তিনি কোনো অর্থ গ্রহন করেন না বলে দাবী করেন।
এসব বিষয়ে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের নারী উদ্যোক্তা নাসিমা খাতুন বলেন, জন্মমৃত্যু সনদের সেবাটা আমি দেই না। বাইরের সেবা দিয়ে থাকি। সেখানে কি অনিয়ম হলে তা পুরুষ উদ্যোক্তা বা সচিব বলতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা অর্থ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, জন্ম বা মৃত্যু সনদ লিপিবব্ধ তিনি করেন না। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের পুরুষ উদ্যোক্তা অনুপ কুমার সব কিছু লিখে তার কাছে নিয়ে গেলে তিনি এতে স্বাক্ষর করেন। এখন থেকে আগে পুরুষ উদ্যোক্তার স্বাক্ষর থাকলে পরে তিনি প্রতিস্বাক্ষর করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, আমাদের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সব কিছু প্রস্তুত করে সচিব সামনে ধরলে আমরা সেখানে স্বাক্ষর করে থাকি। তাৎক্ষনিকভাবে যাচাই বাছাই করার সুযোগ থাকে না। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই যে এসব ঘটনার সাথে জড়িত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই