বিএনপিতে সামনে আসছেন ত্যাগী ও তরুণরা
আগামীতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে বিগত দিনের ব্যর্থতা অনুসন্ধানে নেমেছে বিএনপি। পাশাপাশি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের পরিকল্পনা নিয়ে দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে দলে বয়ষ্কদের অবদান মূল্যায়ন, নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদীদের সক্রিয় করার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
অপেক্ষাকৃত তরুণদের দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসার জন্য বিএনপির নীতি নির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। যে তরুণরা আগামী দিনে আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এতে সাংগঠনিক ভিতও মজবুত হবে।
এ ছাড়া শিগগিরই দল পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন খালেদা জিয়া নিজেই। শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে কর আইনজীবী ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অনেক দিন হয়ে গেল এই বর্তমান সেন্ট্রাল কমিটির। এখন আমাদের পুনর্গঠনের দিকেই যেতে হবে। আমি এ প্রক্রিয়ার কিছু কিছু কাজ শুরু করেছি। যারা ভাল কাজ করবেন, যাদের ত্যাগ আছে, তাদের দলের মধ্যে অবস্থান তৈরি করে দেওয়া হবে।’
আন্দোলেন চলাকালে খালেদা জিয়া বিভিন্নভাবে নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তারা সক্রিয় হননি। অপরদিকে যারা নির্দেশ মেনে আন্দোলনে নেমেছেন বা নামার চেষ্টা করেছেন তাদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নানা অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে। ফলে এই দুই পক্ষের মধ্যে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন তরুণ, মেধাবী ও নিবেদিত প্রাণদের নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একইসঙ্গে পেশাজীবীদেরকেও যথাযথ মূল্যায়নের চিন্তা-ভাবনা করছেন তিনি। যারা দলের নেতাদের পাশাপাশি সুযোগ সন্ধানী পেশাজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দখল করে রেখেছেন, তাদেরকেও সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস যেভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়া। ভবিষ্যতে তাদেরকে দলের সামনের সারিতে নিয়ে আসা হতে পারে। এ ছাড়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক অনেক নেতা রয়েছেন যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তাদেরও সামনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নব্বই ও ছিয়ানব্বই সালে বিএনপির আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, চিকিৎসক ও আইনজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেশ সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু এবারের আন্দোলনে তেমনটা ছিল না। বর্তমানে দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। তাই এ আন্দোলনে দলের পক্ষ থেকে কোনো নেতা এগিয়ে আসেননি। পেশাজীবীদের মধ্যে দুয়েকজন আন্দোলনে নামার উদ্যোগ নিলেও সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে তারা পেরে ওঠেননি।
বিএনপির অনেকে মনে করেন, নব্বই সালের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বর্তমানে যেভাবে গুলি করা হয়, গুম করা হয়, তখন এতটা খারাপ অবস্থা ছিল না। নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। তারা রাস্তায় নামতে পারছেন না। বাড়িতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হচ্ছে। মিছিল বের করা যায় না। মিছিলে নির্বিচারে গুলি করা হয়। তাহলে কীভাবে নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তা ছাড়া সাংগঠনিক দুর্বলতা তো আছেই।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি নেতাকর্মী) ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এখনো চলছে। আমরা ঝড়ের মুখেই আছি।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা হত্যা, গুম, হামলা ও মামলা দিয়ে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। সরকার বিএনপিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বিএনপি সন্ত্রাসী ও অস্ত্রের রাজনীতি করে না। আমরা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন দল পুনর্গঠন করা হয়নি। ফলে সাংগঠনিকভাবে কিছু দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা কাটিয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে দল পুনর্গঠনের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
বিগত দিনে দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘যারা যে অনুপাতে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের সে অনুযায়ী সামনে নিয়ে আসা হবে। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অবস্থায় দলের জন্য যে যেমন অবদান রেখেছেন তার মূল্যায়ন সেভাবেই হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দল পুনর্গঠনের কাজ কেবলই শুরু করেছেন। কিছুটা তো সময় লাগবে। কারা নেতৃত্বে আসবেন সেটা ম্যাডাম নিজেই ভাল জানেন।’
তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতা কারাগারে রয়েছেন। অনেকেই আবার আত্মগোপনে আছেন। এ জন্য ম্যাডাম নিজেই মূল্যায়ন ও পুনর্গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন। হয়তো সিনিয়র যারা বাইরে আছেন তাদের সঙ্গেও তিনি পরামর্শ করতে পারেন।’
খালেদা জিয়ার এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আন্দোলনের সময় শুধু গত তিন মাস ধরলে হবে না। গত কাউন্সিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত যারা আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন এবং এখনো যাদের ক্লিন ইমেজ আছে তাদের ম্যাডাম অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।’
তরুণ নেতৃত্ব সম্পর্কে আহমদ আযম খান বলেন, ‘বয়সের ভারে যারা ন্যুব্জ তাদের প্রতি সম্মান রেখেই ম্যাডাম দলের মধ্যে একমোডেশানের (সমন্বয়) কথা ভাবছেন। এখন যারা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে নামতে পারবেন না তাদেরকে তো আর নির্বাহী কমিটিতে রেখে লাভ নেই। এটা সবাই বোঝেন।’দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই