বিএনপিকে নির্বাচনে আনার উদ্যোগ নেবে না আ.লীগ

বেশ জোরেশোরেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে দুই বছর আগেই নেয়া হয়েছে পোলিং এজেন্ট রিক্রুট এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ। পাশাপাশি চলছে জোটের শরিক ও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা। তবে গত নির্বাচনে না আসা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এবার সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে না।

নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরলে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি এবং গঠন করা হবে প্রচার ও প্রকাশনার জন্য কমিটি। এদিকে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর জোটের পরিধি আরো বাড়াতে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সম্প্রতি তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, জোট অটুট আছে ও থাকবে। ভবিষ্যতে জোটের পরিধি আরো বাড়বে এবং আগামী নির্বাচন জোটবদ্ধভাবেই হবে।

অন্যদিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের মিত্রস্থানীয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আগামী নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ জানিয়েছেন, এটা পার্টির বর্তমান সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের এখনো দুই বছর বাকি। ভবিষ্যতে আমরা জোটবদ্ধ নাকি এককভাবে নির্বাচন করব, সেটা সময় বলে দেবে।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। এর পরপরই ধানমণ্ডিতে তার নিজ কার্যালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন তিনি। অবশ্য এর আগে থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সেই প্রস্তুতি চলছে। সেই সঙ্গে চলছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে গুছিয়ে আনার প্রক্রিয়া।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি কয়েক মাস আগে শুরু হয়েছে। দলের জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছি। নির্বাচনী প্রচারের পাশাপাশি চলছে পোলিং এজেন্ট রিক্রুট এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ। এসব কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলেই তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমিটিগুলো করা হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক উপকমিটি ও সেল তৈরি করা হবে। এই উপকমিটি রাজনৈতিক সেলসমূহের পর্যালোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়। নির্বাচনকালীন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ নানা প্রস্তাব দিলেও নির্বাচনে আসেনি বিএনপি। আর বিএনপি ছাড়া সেই নির্বাচনের পর এখন দুই দল বা নেত্রীর দেখা-সাক্ষাতের সুযোগও আর নেই। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

২০১২ সালের নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় গিয়ে কমিশনের বিষয়ে কোনো মত না রেখে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটিই জানিয়ে এসেছিল বিএনপি। বিএনপির বর্জিত নির্বাচন করে টিকে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকার এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। উপরন্তু এবার বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেও তেমন কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনা আমাদের দায়িত্ব না। এটা তাদের ব্যাপার। তবে বিএনপি নেতারা তো বলেছেন তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থেই নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকারকে তাদের ডেকে আনতে হবে কেন? সরকার এমন একটি আবহ এবং এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই