বাস্তবেও খুনের সঙ্গে জড়িত যে বলিউড তারকারা

আজকাল পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল হয়ে উঠেছে দূর্বিষহ- খুললেই চোখে পড়ে খুনের সংবাদ। যদিও বাস্তব কাহিনি নিয়েই গড়ে ওঠে সিনেমার প্লট, তবে কিছু কিছু খুনের ঘটনা হার মানায় রূপালী পর্দার গল্পকেও। চোখে ঠুলি পরা নাগরিক জীবনেও আঁতকে ওঠে সকলে- এটা কি মানুষের কাজ! স্বার্থ, সম্পর্ক কিংবা মানবিকতা ভুলে বাস্তবের এসব খুনে কাহিনিতে জড়িয়ে আছে মিডিয়ার মানুষজনও। পর্দার অভিনয়কে বাস্তবে এনে হত্যা কিংবা আত্মহত্যায় অভিযুক্ত এমন কিছু ভারতীয় তারকা-

ইন্দ্রানী মুখার্জি: নিজের মেয়ে শিনা হত্যা মামলায় গত ২৫ আগস্ট মুম্বাই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন স্টার ইন্ডিয়ার সিইও পিটার মুখার্জির স্ত্রী ইন্দ্রানীকে। মায়ের হাতে মেয়ে খুন! এমন ঘটনায় শুধু মিডিয়া নয়, চমকে উঠেছে দেশবাসী। খুনের ভয়াবহতায় আঁতকে উঠেছে বিশ্বের সকল স্বাভাবিক চিন্তার মানুষ। খুনী এই মায়ের জীবনী হার মানাবে কোন অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠানের ধারণাকেও।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ দাসের সঙ্গে সম্পর্কে মেয়ে শিনা ও ছেলে মিখায়েলের মা হন ইন্দ্রানী। আসামের বাপের বাড়ি সন্তানদের রেখে ১৯৯০ সালে চলে আসেন কলকাতা। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন সঞ্জীব খান্নাকে, জন্ম নেয় মেয়ে বিধি। স্বামী সন্তান রেখে ২০০১ সালে উড়াল দেন মুম্বাই, কাজ নেন একটি এইচআর ফার্মে যার ক্লায়েন্ট আম্বানীর রিলায়েন্স গ্রুপ। ২০০২ সালে দেখা পান কোম্পানীর বড়কর্তা পিটার মুখার্জির। পূর্বাভাষ ছাড়াই কলকাতায় ফিরে ডিভোর্স করেন সঞ্জীবকে। ২০০২ সালের নভেম্বরে মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই বিয়ে করেন পিটারকে। স্টার ইন্ডিয়ার সিইওর স্ত্রী, হয়ে ওঠেন কোম্পানীর অন্যতম প্রধান ব্যক্তি।

২০০৫ সালে স্বামী পিটারের সঙ্গে প্রেমিকের সন্তান শিনা ও মিখায়েলকে পরিচয় করিয়ে দেন নিজের ছোট ভাই বোন হিসেবে। মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে পাঠান তাদের। ২০০৮ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সেরা ৫০ ভারতীয় নারী ব্যবসায়ীর মধ্যে নিজের নাম প্রকাশ করান তিনি।

আসামের মধ্যবিত্ত মেয়ে পরী বোরা থেকে আজকের ইন্দ্রানী মুখার্জি- গোপন অতীত প্রকাশের ভয়ে ২০১২ সালে মেয়ে শিনাকে শ্বাস রোধ করে খুন করেন তিনি। মিখায়েলের প্রশ্নের মুখে জানায়, আমেরিকায় পড়তে পাঠানো হয়েছে শিনাকে। অবশেষে রহস্যের জট খুলেছে, প্রকাশিত হয়েছে সত্য। এ কাহিনি কি রূপকথার মত নয়?

লায়লা খান: পাকিস্তানে জন্ম নিলেও বড় হয়েছেন মুম্বাই, সে সূত্রে বলিউডে অভিনয় শুরু করেন লায়লা। ২০০৮ সালে ‘ওয়াফা’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক ঘটে তার। কিন্তু সে বছরই খুন হন রহস্যজনক ভাবে। ঘটনার জট খোলে প্রায় ৪ বছর পরে, ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় সৎ বাবা পারভেজ তাকের হাতেই খুন হয়েছেন তিনি। মুম্বাই পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে পারভেজ জানান, ব্যক্তিগত ফার্ম হাউজে প্রথমেই স্ত্রী সেলিনাকে খুন করেন। তারপর লায়লা ও আরও চারজন প্রত্যক্ষদর্শীকে একে একে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছেন।

কমল সাদানা: ১৯৯২ সালে ‘বেখুদি’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় নতুন এক জুটি- কাজল ও কমল। প্রয়াত নির্মাতা ব্রিজ সাদানার ছেলে কমল ব্যক্তিগত এই দু:খ দীর্ঘদিন চেপে রেখে চার বছর হয় প্রকাশ করেছেন, শুনে চমকে গেছে বিশ্ববাসী। ১৯৯০ সালের ২১ অক্টোবর বান্দ্রার বাড়িতে নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে গুলি করে খুন করেন কমলের বাবা, সেদিন ছিল কমলের ২০তম জন্মদিন। ছেলেকেও গুলি করেছিলেন তিনি, কিন্তু গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে যান কমল। সেই ভয়াল রাতেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন ব্রিজ সাদানা।

প্রিয়া রাজবংশ: ১৯৭০ সালের ‘হির রাঞ্ঝা’ বা ১৯৭৩ সালের ‘হাঁসতে জাখাম’ ছবিতে অভিনয় করে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন প্রিয়া। নির্মাতা চেতন আনন্দের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কটাও জানা ছিল সকলের, বিয়ে না করেই একসঙ্গে থাকতেন তারা। মৃত্যুর আগে প্রিয়ার নামে সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ লিখে দিয়ে যান চেতন। বাকি দুই অংশ থাকে আগের ঘরের দুই ছেলে কেতন আনন্দ ও বিবেক আনন্দর নামে। ২০০০ সালে রুজা পার্কের নিজ বাংলাের বাথরুমে পাওয়া যায় প্রিয়ার লাশ- তদন্তে জানা যায়, সাগরের পাশের এই বাংলোটি অনেকদিন থেকেই চাইছিলেন দুই সৎ ছেলে। অপরাধ প্রমাণে প্রিয়া রাজবংশ হত্যায় অভিযুক্ত হন দুই ভাই।

নীরাজ গ্রােভার: টেলিভিশন এক্সিকিউটিভ নীরাজ গ্রোভার হত্যা হেডলাইন হয় ২০০৮ সালে। শুধু অপরাধ পাতা নয়, খবরটি গুরুত্ব পায় পেজ থ্রিতেও। কারণ এই হত্যায় জড়িয়ে যায় কন্নড় অভিনেত্রী মারিয়া সুসাইরাজের নাম। রিপোর্টে জানা যায়, মুম্বাইতে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় এবং বাড়ি ভাড়া প্রসঙ্গে মারিয়াকে সাহায্য করছিলেন নীরাজ। একিদন মারিয়ার প্রেমিক নেভী অফিসার এমিল জেরােমি ম্যাথিউ ফোনে শুনতে পান নীরাজের কণ্ঠ- সন্দেহের বশে হাজির হন মুম্বাই। ৬ মে, নীরাজের জন্য নেমে আসে মৃত্যুর ভয়াল অন্ধকার। মারিয়ার রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে নীরাজকে বীভৎসভাবে খুন করে জেরোমি ম্যাথিউ। তারপর প্রেমিকার সহায়তা নিয়ে লাশ ব্যাগে ঢুকিয়ে প্রমাণ লোপাটের জন্য আগুন জ্বালিয়ে দেন। কিন্তু অপরাধ প্রমাণ হয় ঠিকই- প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ৩ বছরের জেল খেটে মুক্ত হয়েছেন মারিয়া, কিন্তু আগামী ১০ বছরও জেলের ভাত খাবেন জেরোমি।

গুলশান কুমার: ১৯৯৭ সালে আন্ধেরি মন্দিরের বাইরে আততায়ীর হাতে খুন হন ভারতীয় মিউজিকের অন্যতম প্রাণ পুরুষ গুলশান কুমার। মন্দির থেকে বেরুলে দুই মোটরসাইকেল আরোহী তিনবার গুলি ছোড়েন তার দিকে, বাঁচার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুই খুনী কাছে এসে ১৫ বার গুলি করে শেষ করেন বন্দুকের ম্যাগাজিন। মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্তে উঠে আসে, আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহীম অনেকদিন থেকেই ১০ কোটি টাকা চেয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন গুলশান কুমারকে। গভীর তদন্তে বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল- জানা যায় দুবাইতে দাউদ ইব্রাহীমের ভাই আনিস ইব্রাহীম কাসকারের সঙ্গে এই হত্যার পরিকল্পনার মুল হোতা মিউজিক কম্পোজার নাদিম।

এমন সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে বলিউডি ছবি।২০১১ সালে মুক্তি পায় ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ এবং ‘নট আ লাভ স্টোরি’। প্রথমটি মডেল জেসিকা হত্যাকাণ্ড ও পরেরটি নীরাজ গ্রােভার হত্যাকাণ্ড নিয়ে। রূপালী পর্দায় উঠে আসবে শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডে ইন্দ্রানী মুখার্জির কাহিনিও- এমন খবরই শোনা যাচ্ছে বলিউডি বাতাসে।



মন্তব্য চালু নেই