বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সাইকেল

পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাওয়া স্মৃতি খাতুনের জন্য কষ্টকর ছিল। তাই দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবার তাকে বিয়ে দেয়। একই কারণে নবম শ্রেণির ছাত্রী রানী সুলতানাকে বিয়ে দেওয়া হয়। তারা দুজনেই ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পাড়াগাঁয়ের প্রতিষ্ঠান ভায়না শহীদ মোশারফ-দলিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল।

যাতায়াতের কষ্ট দূর করতে ২০১৫ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের ১৪ ছাত্রীকে বিয়ে দিয়েছে তাদের পরিবার। এভাবে প্রতিবছরই ১২-১৫টি মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেন অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, মেয়েকে এত দূরের স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়।

তবে ছাত্রীদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব ও বাল্যবিবাহ ঠেকাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম ওরফে মিন্টু। ইতিমধ্যে ১৭টি বাইসাইকেল ১৭ জন ছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ৬২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মেয়ে। বিদ্যালয়টি ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার, আর উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পাড়াগাঁয়ে অবস্থিত। এ উপজেলার ভায়না বাজারে প্রতিষ্ঠিত ভায়না শহীদ মোশারফ-দলিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গত এসএসসি পরীক্ষায় ১০৯ জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ ও মেয়েদের কষ্ট দূর করতে সাইদুল করিম মেয়েদের মধ্যে সাইকেল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন। পর্যায়ক্রমে গরিব, মেধাবী ও পড়ালেখায় যারা আগ্রহী, তাদের হাতে সাইকেল তুলে দেওয়া শুরু করেছেন।

১৪ জানুয়ারি দুই শিক্ষার্থীর হাতে দুটি সাইকেল তুলে দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সাইদুল। এ সময় ইউএনও মনিরা পারভীন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতান আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দুই দফায় তাঁর প্রতিষ্ঠানে ১৭টি সাইকেল দেওয়া হয়েছে। সাইকেল পেয়ে খুশি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফিরোজা খাতুন। সে বলে, ‘অনেক আগে থেকেই সাইকেল চালাতে পারি। কিন্তু বাবা চালাতে দেননি। এখন সভাপতির দেওয়া সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসছি। বাবাও কিছু বলছেন না। সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসায় আমার কষ্ট কমেছে, বেড়েছে পড়ালেখার আগ্রহ।’

বিদ্যালয়ের সভাপতি সাইদুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের এগিয়ে নিতে নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানে পাড়াগাঁয়ের স্কুল হওয়ায় মেয়েরা অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে—এটা হতে পারে না। তাই তিনি এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে এভাবে আরও সাইকেল বিতরণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই