ছাত্রীর পিতার প্রতিকার চেয়ে আবেদন, মারপিটের অভিযোগে ছাত্রের পিতার মামলা

বালিয়াকান্দির নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত ॥ এলাকায় থমথমে অবস্থা

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। গত ৩দিন ধরে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছে। ছাত্রীর পিতার প্রতিকার চেয়ে আবেদন ও ছাত্রের পিতার আদালতে দায়েরকৃত মামলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বেরুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রীর পিতা প্রধান শিক্ষকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন, তার নাবালিকা কন্যা বিদ্যালয়ে আসার পথে বেরুলী গ্রামের ছায়েদ শেখের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন প্রায়ই উত্যক্ত করে। গত ১৫ এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টার দিকে মোয়াজ্জেম হোসেন ওই বিদ্যালয়ে আসে এবং তার কন্যাকে অসামাজিক কাজের প্রস্তাব দেয়। তার কন্যা ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মোয়াজ্জেম হোসেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে রক্তপাত ঘটিয়ে ভীতি প্রদর্শন করে। ঘটনার সময় ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে ওইচই করলে মোয়াজ্জেম হোসেন পালিয়ে যায়।

এদিকে নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেনের পিতা সায়েদ আলী শেখ বাদী হয়ে তার ছেলেকে গত ১৫ এপ্রিল ডেকে নিয়ে আবু জাফর খা, মুরাদ, মনসুর ও আঃ রাজ্জাক মিলে লোহার রড দিয়ে মারপিটের অভিযোগ এনে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে মিসপি-১১৪/১৫ মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ডেকে এনে বেরুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে আটকিয়ে ভাঙ্গা চেয়ারের লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনার প্রতিবাদে গত ২১ এপ্রিল সকালে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে। পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রয়েছে।

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ আলী, রফিকুল ইসলাম, নবম শ্রেণীর ছাত্র মাহফুজুর রহমান, ছাত্রী তানিয়া জানায়, আমরা ৩টি পরীক্ষা বর্জন করেছি। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা থাকলেও আমরা উপস্থিত হয়নি। মোয়াজ্জেমের মারপিটের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নিব না।
প্রত্যক্ষদর্শী এস,এস,সি পরীক্ষার্থী শামীম জানায়, গত ১৫এপ্রিল ১১ টার দিকে নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি পরিক্ষার্থী মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন (১৫) কে আমার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে যায় কমিটির সদস্য মুনছুর । প্রাইমারী স্কুলের লাইব্রারীতে নিয়ে হাই স্কুলের কৃষি শিক্ষক মোঃ মুরাদ হোসেন, কমিটির সভাপতি মোঃ জাফর আলী খাঁনসহ অন্যান্যেরা প্রথমে কিল ঘুষি পরে পাশের রড দিয়ে বেধড়ক ভাবে মারপিট করে ।

ওই ছাত্রের পিতা ছায়েদ শেখ জানান, তাকে ডেকে নিয়ে কোন কথা না শুনেই তার হাতে রড তুলে দিয়ে ছেলেকে মারপিট করতে বাধ্য করে। নইলে পুত্রকে চুল কেটে নারী নির্যাতন মামলায় থানা পুলিশের কাছে দিবে । বাধ্য হয়ে দু একটা বাড়ী দিয়ে ছেলেকে নিয়ে প্রথমে বালিয়াকান্দি হাসপাতালে পরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে বাড়ীতে রয়েছে।

ওই ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন জানায়, ওই উত্যেক্তের সাথে সে জড়িত নয়। তাকে পরিকল্পিত ভাবে মারপিট করা হয়েছে।
নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তায়জুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বহিরাগত লোকজন স্কুলে ঢুকে প্রতিনিয়ত ঝামেলার সৃষ্টি করছে। থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।

নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ আবু জাফর খান জানান, স্কুলে আসলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে লাইব্রেরীতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে ৫ম শ্রেনীর ছাত্রীর যৌন হয়রানীর বিষয়টি খুলে বলে। ওই ছেলেকে ডেকে আনলে সে স্বীকার করায় তার অভিভাবককে খবর দিলে সে এসে ছেলে নিজ হাতে শাসন ও ভবিষ্যতে এধরনের কাজ করবে না বলে অঙ্গীকার দিয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়।

নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনার সময় ছিলেন না। পরে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তবে ২০ এপ্রিল থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছেন না বলে সত্যতা স্বীকার করেন।

বেরুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামীমা নাসরিন জানান, যৌন হয়রানীর ঘটনায় ওই ছেলের পিতা নিজেই শাসন করে তার ছেলেকে নিয়ে যায়। তবে অন্যান্যে ব্যাক্তিদের মারপিটের কথা অস্বীকার করেন।

বেরুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজমিরী তানজিম জানান, গত ১৫ এপ্রিল যৌন হয়রানীর বিষয়ে ওই ছাত্রীর পিতা প্রতিকার চেয়ে আমার নিকট লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ এস,এম শাহজালাল জানান, ওই ঘটনায় মোয়াজ্জেমের পিতা বাদী হয়ে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জাফর আলী খাঁ ,শিক্ষক মুরাদ সেখ, পরিচালনা কমিটির সদস্য মুনছুর আলী ও আফিস সহকারী আব্দুর রাজ্জাককে আসামী করে গত ২০ এপ্রিল রাজবাড়ীর ১ নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন । আদালত মামলার তদন্ত করে রির্পোট প্রদানের জন্য ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন । যে কারনে ইতোমধ্যেই তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, স্কুলের সভাপতি বিষয়টি আমাকে অবগত করেছে। তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।



মন্তব্য চালু নেই