বার্মা টাইমস ও বাংলা টাইমসের পেছনে কারা

মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গুলিতে বাংলাদেশের এক সীমান্ত রক্ষীর নিহত হওয়া ও তার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনার পরেই আলোচনায় উঠে আসে বার্মা টাইমস নামের একটি ওয়েবসাইট। হঠাৎ করেই রহস্যজনক নানা সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে এ ওয়েবসাইটটি থেকে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বারবার আলোচনায় আসে বার্মা টাইমসের নাম। কারা এই বার্মা টাইমস? কারা তাদের প্রতিবেদক? কাদের উস্কে দেয়ার জন্য এসব সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে?

বার্মা টাইমসের উৎপত্তি খুঁজলে পাওয়া যায় বেশ রহস্যজনক কিছু তথ্য। সেখানে দেখা যায় মোহাম্মদ ইব্রাহীম নামের এক ব্যক্তি বার্মা টাইমস ডট নেট নামের ওই ডোমেইনটি কেনেন ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠানের নাম হিসেবে এসেছে বাংলাটাইমস ডট কম ডট বিডি, যাদের কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ঢাকার কাজীপাড়ায়। আর মোহাম্মদ ইব্রাহীম তার ঠিকানা হিসেবে দিয়েছেন জার্মানির একটি শহরের নাম। টেলিফোন নম্বরও দেয়া হয়েছে জার্মানির।

আর বিভ্রান্তিকর তথ্য সংবলিত ও রহস্যজনক এই ওয়েবসাইটটি হঠাৎ করে তাজা হয়ে উঠেছে। হালনাগাদ হচ্ছে নিয়মিত। মূলত বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার পরপরই তাজা হয়ে ওঠে বার্মা টাইমস। প্রকাশ হতে থাকে উস্কানিমূলক তথ্যেপূর্ণ কিছু সংবাদ।

বার্মা টাইমসের সূত্র ধরেই পাওয়া যায় বাংলা টাইমসের নাম, বাংলা ভার্সনে যাদের সর্বশেষ সংবাদ ‘ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই: ৮ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড।’

এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় নামসর্বস্ব এই নিউজপোর্টালটি একেবারেই হালনাগাদ করা হয় না। এর সম্পাদকের নাম দেয়া রয়েছে সোহেল চৌধুরী। যোগাযোগের জন্য ঠিকানা দেয়া হয়েছে- বাসা: ৫৬২, গ্রাউন্ড ফ্লোর, পূর্ব কাজীপাড়া, ঢাকা ১২১৬, বাংলাদেশ। ইমেইল ঠিকানা দেয়া রয়েছে- [email protected]

আবার বাংলাটাইমসের মূলপাতা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে ইব্রাহীম নামে একব্যাক্তির টুইটার অ্যাকাউন্টের লিঙ্ক। ওই অ্যাকাউন্টের টুইটগুলো পর্যবেক্ষণ করে এ কথা মনে করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে, এই ইব্রাহীমই সেই মোহাম্মদ ইব্রাহীম, যিনি জার্মানি থেকে ২০১৩ সালে বার্মা টাইমস ডোমেইনটি কিনেছিলেন।

ওই টুইটার অ্যাকাউন্টে ইব্রাহীমের পরিচয়ে দেয়া রয়েছে তিনি একজন রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্ট। ঠিকানা দেয়া রয়েছে- জার্মানি।

এসব বিষয় বিবেচনায় এনে একথা স্পষ্ট যে, বার্মা টাইমস, বাংলা টাইমস ও মোহাম্মদ ইব্রাহীম একই সূত্রে গাঁথা এবং তার সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুও সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেওয়ার পর হঠাৎ উৎসুক হয়ে ওঠা বার্মা টাইমস ও তাদের বিশেষ ধরনের সংবাদ প্রকাশের প্রবনতা থেকে ওই গোষ্ঠীর বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

এদিকে ৩০ মে বার্মা টাইসম প্রকাশ করে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়তে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ‘বার্মিজ ইউনাইটেড আর্মড ইউনিট’ (বিইউএইউ)। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দল সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সামনে এগোলে তা মোকাবিলা করতে ভালোভাবেই প্রস্তুত। বার্মিজ সেনাবাহিনীর একজন মেজরের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ‘বার্মা টাইমস’।

তবে নিরাপত্তার কথা জানিয়ে তারা ওই কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি। ওই মেজর বলেন, ‘বার্মা-বাংলাদেশ সীমান্তে বিইউএইউকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে মিয়ানমার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং টাটমাডাও (সেনাবাহিনী) টেকনাফ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত দখল করে নেয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ!’

অবশ্য বার্মা টাইসে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।



মন্তব্য চালু নেই