বাজেট বাস্তবায়নে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী
২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে খুবই আশাবাদী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বাজেট অবশ্যই উচ্চাভিলাষী কিন্তু তা বাস্তবায়নযোগ্য। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে বড় সারা পাচ্ছি, রাজস্ব আদায়েও সক্ষমতা বেড়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজেট বাস্তবায়নে বড় সহায়ক হবে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। এবার উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট একটি প্রস্তাব। বাস্তবায়নের সময় অনেক কিছুই সংযোজন-বিয়োজন করতে হয়। একটি ছোট বাজেট দিয়ে, তা পুরোপরি বাস্তবায়নের মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। স্বাধীনতার পর সাড়ে সাতশ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছিল। আজ ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। স্বপ্ন দেখেই এগুতে হয়।
বিনিয়োগ নিয়ে মুহিত বলেন, আমরা গত দেড় বছরে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে বড় একটি ধাক্কা পেয়েছি। এসময় প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছি। বেসরকারি খাতও এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে দেড় বছরে পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে- এদেশের মানুষ স্ট্রাইক (হরতাল) বা ধর্মঘট আর চায় না। এখানকার শ্রমিকরা অহেতুক ছুটি কাটায় না। তারা নির্বিঘ্নে কাজ করতে চায়। এটাই আমাদের বিনিয়োগে আশাবাদী করে তুলেছে।
রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে বলতে পারি আমরা অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছি। যে দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।
জেলা বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। অভিজ্ঞতাও ভাল।
তেলের দাম প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, জ্বালানি তেলের দাম সামান্য কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের একটু সাবধানতা অবলম্বন করে দাম সমন্বয় করতে হবে। কেননা বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে তেলের দাম আবার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
তবে দেশে তেলের দাম সমন্বয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা অনুসারে কাজ করবেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই সরকার যতদিন আছে ততোদিন কালো টাকা সাদা করার আইন বলবৎ থাকবে। বর্তমানে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা নিয়ে ‘অহেতুক’ প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী হলেও বাস্তবায়ন যোগ্য। এ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সত্যিই দুঃখজনক। বাজেট হয়েছে প্রগতিশীল ধারায় আর বিএনপি মন্তব্য করেছে প্রতিক্রিয়াশীল ধারায়।
এই বাজেটটি গণমুখী দাবি করে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, বিএনপির যিনি বা যে নেত্রী বাজেট নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, তিনি হয়ত বাজেট বক্তৃতা শোনেননি অথবা পড়েননি। অনেকেই বলেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী। বাস্তব কথা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী না হলে উপরে ওঠা যায় না। যেমন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই বাংলাদেশ পেয়েছি। তখন অনেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে উচ্চাভিলাষী বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সিপিডি বলেছে- ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাস্তব সম্মত। এটা দেশের জন্য প্রয়োজন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা মধ্য আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যে সমালোচনাই করা হোক। এই বাজেট বাস্তব সম্মত।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধী নিধন করেছি, জঙ্গিবাদও নিরসন করতে পারবো। আমাদের এই অগ্রযাত্রা থামানোর জন্য বিএনপি গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছে। আমরা উন্নয়নের মহা সড়কে আছি।
মন্তব্য চালু নেই