বাগমারার জোড়া খুনের মামলার নাটকীয় মোড়

সরকার দুলাল মাহবুব, রাজশাহী থেকে : রাজশাহীর বাগমারায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নিয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে এনামুল হক নামে এক বিএনপির নেতাই হচ্ছে ওই জোড়া খুনের মুল পরিকল্পনাকারী। ইতোমধ্যে এনামুল হক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে।

মামলার তদন্তটি প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের(পিবিআই) সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ন।

মুল পরিকল্পনাকারী এনামুল হক উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক ও দ্বীপনগর কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক। জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার কর্মকর্তারা জোড়া খুন মামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে ১৪ আগস্ট রাতে দ্বীপনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে এনামুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ও গ্রেপ্তারকৃত এনামুলের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ি মোটা অংকের মাদক পাচারের টাকার ভাগবাটোয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে ওই দিন মা-ছেলেকে খুন করা হয়েছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের(পিবিআই) সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ন(এএসপি) হুমায়ন জানান, এ হত্যাকা-ে যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিলো তাদের অনেক আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি দুর্গাপুর থেকে রহমত নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ি মুল হোতা এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্তে জানা গেছে, এনামুল হক একজন মাদকসেবি। সে দুর্গাপুর এলাকার মাদক ব্যবসায়ী রহমতের বাড়িতে মাদক খেতে আসতো। একদিন এনামুল হক একজনকে শায়েস্তা করার কথা বলে রহমতের কাছে। তখন রহমত ওই কিলারদের সঙ্গে এমামুলের পরিচয় করে দেয়। এরপরেই হত্যাকা- সংগঠিত হয়।

এএসপি হুমায়ন আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে এটাও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এমামুল হক নিজে উপস্থিত থেকে কিলারদের দিয়ে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। মামলাটির তদন্ত ৯৫ ভাগ শেষ হয়ে এসেছে। অল্প কিছু তথ্য উপত্তা সংগ্রহের বিষয় চলছে। সেগুলো সংগ্রহ হয়ে গেলেই চার্জশীট দিয়ে দেয়া হবে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের দেউলা গ্রামে চৌরাস্তার পাশে পাকা বাড়ীতে মা আকলিমা ও ছেলে জাহিদকে নির্মম ভাবে খুন করা হয়। পরের দিন (সোমবার) সকালে ওই বাড়ীতে কাজ করতে আসা রাজমিস্ত্রিরা ও নিহতের বড় ছেলে খুনের ঘটনাটি প্রথম দেখতে পান।

ওই দিনই ২৫ নভেম্বর নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে বাগমারা থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যাকা-টির তদন্ত নানান নাটকিয়তার মোড় নেয়।

এভাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও তিন দফা পরিবর্তন করা হয়। তবুও বাগমারা থানা পুলিশ মামলায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। হত্যাকা-ের দুই মাস পর ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি নিহত আকলিমার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ডোমদের কাছে। সে সময় এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক(এসআই) মাসুদ পারভেজ রাজশাহী থেকে চার ডোমকে গ্রেপ্তার করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়। তবে, সেখানেও অন্য ঘটনা উঠে আসে। লাশ দুইটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে আসলে নিহত আকলিমার কাপড়ের মধ্যে থেকে মোবাইলটি পায় ডোমেরা। বিষয়টিও আগে পেছনে না ভেবে লোভে মোবাইল ফোনটি লুকিয়ে ফেলে।

সে সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ জানিয়েছিলেন, হত্যাকা- সম্পর্কে চার ডোমের কাছে গুরুত্বপূর্ন পাওয়া তথ্য পাওয়া যাবে এমন সন্দেহের কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। হত্যাকারী কে বা কারা তা ডোমদের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি।

এর পরেই মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে(পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই মামলার অনেকটা অগ্রগতি হয় ও মুলহোতা চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। অপরাধ তদন্ত বিভাগ নিহত আকলিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি ট্রাকিং করে পাশের দূর্গাপুর উপজেলা থেকে হত্যাকা-ের সাথে জড়িত ভাড়াটে দুই হত্যাকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়।

পরে তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জানতে পারে হত্যাকা-ে মূল পরিকল্পনাকারী একই ইউনিয়নের বিএনপি নেতা কলেজ শিক্ষক এনামুল হক। তিনি শিক্ষকতার আড়ালে একজন মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত ফেন্সিডিল সেবনকারী হিসাবে এলাকায় পরিচিত।

এই এনামুলের সঙ্গেই মাদক পাচার নিয়ে নিহত আকলিমা বেগমের গোপন সখ্য গড়ে ওঠেছিলো। এনামুলের মাদক ব্যবসার অর্থের যোগানদাতা ছিলেন আকলিমা বেগম। সম্ভবত অর্থ ও মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলে ধারনা করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলাটির মূল পরিকল্পনাকারী সনাক্ত ও গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম এখন দ্রুত এগোবে।



মন্তব্য চালু নেই