বাইক ও প্রেমিকা বদলিয়ে স্টান্টবাজি, পরিণাম ভয়াবহ

বাইক নিয়ে দিনের পর দিন স্টান্টবাজি বেড়েই চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার সোনারপুর থানার অন্তর্গত দক্ষিণ শহরতলি লাগোয়া ইএম বাইপাসের কামালগাজি উড়ালপুলে। সেই স্টান্টবাজি করতে গিয়েই রবিবার রাতে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পায়েল গুহ(১৮) ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের(২০)। রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে কামালগাজি উড়ালপুলের মাঝখানে।

দুর্ঘটনার পরে দুজনকেই স্থানীয় নার্সিং হোমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করে। প্রতিদিন সন্ধ্যে নামলেই এই কামালগাজি উড়ালপুলে বাইক স্টান্টবাজদের দৌরাত্ম্যে সাধারন মানুষদের চলাফেরাই দায় হয়ে যায় এই উড়ালপুল দিয়ে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তো বটেই, দক্ষিণ কোলকাতার বাইকবাজদেরও অন্যতম প্রিয় গন্তব্য এই কামালগাজি উড়ালপুল।

মাত্র বছর দু’য়েক আগেই এই উড়ালপুল খুলে দেওয়া হয়েছিল জনসাধারণের জন্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গে কোলকাতার যোগাযোগ আরও ভাল করার লক্ষ্যেই এই উড়ালপুল নির্মিত হয়ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই এই সেতুতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা দায় হয়ে উঠছে বাইকবাজদের সৌজন্যে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনা। রবিবার রাতে দু’টি বাইকে করে চার বন্ধু আসে এই কামালগাজি উড়ালপুলে। রাহুল ও সুস্মিতা এবং আমান ও পায়েল একে অপরকে ভালোবাসত।

দু’টি বাইকে করে নেতাজিনগর ও রিজেন্ট পার্ক এলাকা থেকে এই কামালগাজি উড়ালপুলে রাত ন’টা নাগাদ এসেছিল তারা। এখানে এসে রাহুল আমানের মোটর বাইক ও গার্লফ্রেন্ডের দায়িত্ব নিজে নেয়। অন্যদিকে রাহুলের বাইকে রাহুলের বাইকে রাহুলের গার্লফ্রেন্ড সুস্মিতাকে নিয়ে আমান চলতে থাকে। সুস্মিতার কথা অনুযায়ী, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রাহুল পায়েলকে আমানের বাইকের পিছনে বসিয়ে উড়ালপুলের উপর দিয়ে ঝড়ের গতিতে বাইক ছোটাতে থাকে।

সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উড়ালপুলের মাঝ বরাবর রাহুলের বাইকের হ্যান্ডেল উড়ালপুলের রেলিংএ আটকে যায়। বাইকের ভীষণ গতি থাকায় পিছনে বসে থাকা পায়েল বাইক থেকে ছিটকে পড়ে উড়ালপুলের নীচে বাজার এলাকায়। হঠাৎ করে এই মেয়েটি কোথা থেকে এখানে পড়ল খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্থানীয় মানুষজন। তাঁরাই উড়ালপুলের উপর গিয়ে দেখেন, সেখানে রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে রাহুল। দু’জনকেই উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় নার্সিং হোমে। সেখানে দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

খবর পেয়ে সোনারপুর থানার পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। রাহুল ও পায়েলের দুই বন্ধু আমন ও সুস্মিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহত দু’জনের বাড়ি দক্ষিণ কোলকাতার রিজেন্ট পার্ক ও নেতাজিনগর থানা এলাকায়। রাহুলের গার্লফ্রেন্ড সুস্মিতা বলে, ‘ রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আমরা চারজন মিলে দুটো বাইকে করে কামালগাজি উড়ালপুলের কাছে আসি। এখানে অনেকক্ষণ বসেও ছিলাম আমরা। এর পর রাত দশটা নাগাদ রাহুল বলে, আমি আমনের বাইকটা চালাবো। পায়েলও বলে বাইক পাল্টালে গার্লফ্রেন্ড-ও পাল্টাতে হবে। সেই কোথা মেনেই রাহুলের বাইকের পিছনে পায়েল সওয়ারি হয়। আমি ও আমনের বাইকের পিছনে উঠি। ওরা উড়ালপুলের উপর দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে যায়। আমি আর আমন অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দীর্ঘক্ষণ ওদের খোঁজ না পেয়ে আমরা উড়ালপুলের উপরে এসে দেখি এই দুর্ঘটনা ঘটেছে”।

ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সোনারপুর থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই চারজন বাইক আরোহীর কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। পুলিশের তরফ থেকে বারে বারে এ বিষয়ে মাইকিং করে বাইক আরোহীদের সাবধান করা হলেও এই স্টান্টবাজির প্রবণতা যে এতটুকুও কমেনি, তা আবারও প্রমাণিত হল।



মন্তব্য চালু নেই