বাংলা ছবির কমেডির বাবা হতে চেয়েছিলেন বডিবিল্ডার

২৪শে নভেম্বর, বাংলায় স্থান হারিয়ে ফেলা কমেডি জগতের ‘বা-বা’র জন্মদিন এই দিনেই। বাংলার কমেডির বা-বা বললে বুঝতে অসুবিধা হবে কাল কা যোগীদের। যাই হোক তাঁদের জন্যই বলে দি, ১৯৩১-এর আজকের দিনেই জন্মেছিলান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার।

হ্যাঁ রবি ঘোষ বা রায় বাবুর সাধের বাঘা বাইন। কমেডি করে লোকহাসানো মানুষটা আদতে কিন্তু বডি বিল্ডার হতে গিয়েছিলেন। যার জন্যই ছাত্রজীবনে আশুতোষ কলেজেই চলত শরীর চর্চা। তারপর, কিভাবে কিভাবে যে ফিল্ম জগতে চলে এলেন নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। এই রবি চর্চা আসলে তাঁর বডি বিল্ডিং প্রেম এবং তাঁর অভিনয় হিরোগিরি নিয়ে।

বডি বিল্ডিং করে ফিল্ম জগতে আসা মানেই হিরো হওয়ার স্বপ্ন। না, সে সময় হিরোদের বাহুবলি হওয়ার দরকার পড়ত না। যেটা দরকার পরত সেটা সুন্দর মুখ আর আসল অভিনয়ের। সে বদন ছিল না রবীন্দ্রনাথ ঘোষদস্তিদার বাবুর। তাই বডি দিয়েও প্রকৃত হিরো হয়ে ওঠা হয়নি। কিন্তু তপন সিনহার “গল্প হলেও সত্যি” দেখে থাকলে কে বলবে ওই লোকটা হিরো নয়। হরিপদ একজন বেঁটেখাটো সাদামাটা লোক। হ্যাঁ, এমনই ছিলেন রবি ঘোষ। ওই চেহারা নিয়েই দিনের পর দিন মিনার্ভা থিয়েটার ভরিয়েছে এই লোকটার অভিনয়। সে অভিনয় কিন্তু বডি বিল্ডারের পেশীর মতোই সাবলীল। মঞ্চের এক একটা চরিত্র বলে ওঠে সে “কি দাপট”!

লোকে বলে যারা চেহারা বানায় তাঁদের মাথায় বুদ্ধি কম হয়। আমি বলি ওই চেহারা বাগানো নিয়েই ব্যস্ত থেকে যদি এমন অভিনয় বুদ্ধি থাকে তাহলে হাজারবার হব বডি বিল্ডার। তাতে লোকে খ্যাঁকসা করলে করুক। শুনেছি রবি ঘোষের বাড়িতেও রয়েছে অনেকের কাছে বিদূষক হিসাবেই বেশী পরিচিত চার্লি চ্যাপলিনের ছবি। চ্যাপলিন বলেছিলেন “Life is a tragedy when seen in close-up, but a comedy in long-shot”। এই মানুষটাকে যিনি পুজো করেন ভেবে দেখুন তারা ক্ষমতাটা। অভিনয়ের স্কিলটা আদতে উঠে আসছে তো ওখান থেকেই।

বাংলা ছবিতে শেষ কমেডিয়ান সম্ভবত শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। কাঞ্চন, খরাজ মুখোপাধ্যায়রা অবশ্যই ভালো কমেডি করেন কিন্তু জাত কমেডিয়ান নয়। ওই কমেডিয়ান হিসাবে পরিচিতিও পেতে চাননি এঁরা। আসলে “কমেডিয়ান” কথাটা শুনলে বড্ড গায়ে লাগে আজকাল। অনেকে হয়তো ভুলে যায় কোন স্ক্রিপ্টে একটু স্বস্তি দেয় ওই একটা কমেডি সিন।

আরও একটা বিষয়, বলিউডে অক্ষয় কুমারকে দেখে বাংলা সিনেমার হিরোরা হঠাৎ করেই কমেডির দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেওয়ার পর থেকেই কমেডিয়ানদের সেদিন গিয়েছে। প্রডিউসার থেকে পরিচালক এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দারুণ খুশি হন। একটু কম খরচ হয়। কিন্তু এই কাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়েছে কমেডির আসল চরিত্র। এখন যা দেখি তা পেটে লাথি মেরে লোক হাসানো ছাড়া কিছু নয়। রবি ঘোষ তুমি যুগ যুগ জিও। পেটে লাথি খেয়ে আর হাসতে পারা যাচ্ছে না। আজ তোমার ৮৬তম জন্মদিনে বলছি প্লিজ, পারলে কামব্যাক করো।



মন্তব্য চালু নেই