বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যত জিয়া

ঘটনাচক্রে বাংলাদেশে অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জিয়া নামে একাধিক সেনা কর্মকর্তার নাম। জিয়াউর রহমান দিয়ে শুরু আর সর্বশেষ সৈয়দ মো. জিয়াউল হক। যাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত জিয়া হচ্ছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ওই সময়ের মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার সময় তিনি উপ-সেনাপ্রধান ছিলেন। আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তাকে জিয়াউর সেনাপ্রধান করা হয়। ওই বছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে তিনি প্রথমে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। এরপরে হন রাষ্ট্রপতি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

মুক্তিযুদ্ধের পর এই জিয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীতে ছিলেন আরেক মেজর জিয়া। অভ্যুত্থান না করলেও সশস্ত্র বিপ্লবের স্বপ্নে সেনাবাহিনী ছেড়ে ১৯৭৩ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টিতে যোগ দেন সেসময়ের লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউদ্দিন।

সিরাজ সিকদার প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ভেঙ্গে গেলে অনেক বছর বাংলাদেশের সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব দেন কর্নেল জিয়া। ১৯৮৯ সালে তিনি গোপন সশস্ত্র রাজনীতির জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। পরে বিএনপি আমলে তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে এই দুই জিয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীতে ছিলেন আরেক জিয়া। তার নামও জিয়াউদ্দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক নিহত হওয়ার সময় তিনি ডিজিএফআই’র ঢাকা ডিটাচমেন্টের প্রধান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন তিনি।এই মেজর জিয়াউদ্দিন ৭৫’র নভেম্বরে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময় কর্নেল তাহেরের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরেও তিনি জাসদ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন অবশ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন।

আগের জিয়ারা যখন সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তখন জন্মই হয়নি আজকের মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ মো. জিয়াউল হকের। তার নাম দেশের মানুষ প্রথম জানতে পারে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তখন সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ধর্মান্ধ গোষ্ঠির অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দেশে অভ্যুত্থান করতে চেয়েছিলেন মেজর জিয়াউল হক।ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে পলাতক আছেন মেজর জিয়া। জঙ্গিগোষ্ঠি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা তিনি। তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।

একইসঙ্গে নিউ জেএমবি’র নেতা তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতেও ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তিনি কানাডায় থাকতেন। একসময় নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর দাবি, তাদেরকে বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেন তামিম চৌধুরী।



মন্তব্য চালু নেই