বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে যাত্রীর খাবারে জীবিত পোকা!

বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যাত্রীকে দেয়া খাবারের প্যাকেটে জীবিত পোকা পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ফ্লাইটের সব খাবার প্যাকেজ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-মালয়েশিয়াগামী একটি ফ্লাইটে ঘটলেও এটি এতদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি জানাজানি হলে এ নিয়ে বিমানজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা গেছে, ৫ ফেব্রুয়ারি বিমানের ঢাকা-মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইট বিজি-১৮৬ এর ১৯ডি আসনের যাত্রীর খাবারে এ পোকা পাওয়া যায়। এভিয়েশন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানের সব ফ্লাইটের খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার (বিএফসিসি) বিভাগের। বিএফসিসি শাখাটি একসময় আন্তর্জাতিকমানের খাবার পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। শুরুতে ১৬-১৭টি দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্স বিমানের বিএফসিসি শাখার তৈরি খাবার কিনে নিত। কিন্তু আস্তে আস্তে খাবারের মান নিন্মপর্যায়ে চলে গেলে একমাত্র বিমান ছাড়া সব এয়ারলাইন্স খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
অভিযোগ, বিমানের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) রাজপতি সরকারের আমলে বিএফসিসি শাখাটি লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়। বিএফসিসির সব ধরনের পণ্যসামগ্রী সরবরাহে একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। লন্ডনে বসে এমদাদ নামে এক ব্যক্তি বিএফসিসির সব ধরনের ঠিকাদারির কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। বাংলাদেশে তাকে সহযোগিতা করেন জাফর নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগ, বিএফসিসির টপ টু বটম এই জাফর-এমদাদের কাছে জিম্মি। এ কারণে বিএফসিসির সরবরাহকৃত সব ধরনের খাবারের মান দিন দিন নিন্ম পর্যায়ে চলে যায়। একপর্যায়ে কয়েক বছর আগে বিমান ম্যানেজমেন্ট বিএফসিসিকে মানসম্মত করার দায়িত্ব দেন বিমানের সাবেক জিএম (প্রশাসন) ও বর্তমান পরিচালক কাস্টমার সার্ভিস ও স্টোর আতিক সোবহানকে।
জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন চেষ্টা-তদবির করে বিএফসিসির মান আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। মানসম্মত হওয়ায় আবারও খাবার নেয়া শুরু করে বেশ কয়েকটি বিদেশী এয়ারলাইন্স। দুর্নীতিও কমে আসে। এর ধারাবাহিকতায় বিএফসিসির দায়িত্ব পান জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) খান মোশাররফ হোসাইন। তিনিও দীর্ঘদিন নানা চেষ্টা-তদবির করে বিএফসিসির মান ঠিক রাখেন।
কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ বিএফসিসির শীর্ষপর্যায়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। অভিযোগ, তখন থেকেই বিএফসিসিতে আবার আগের অনিয়ম-দুর্নীতি আর নিন্মমানের খাবার পরিবেশন শুরু হয়। বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইটে যাত্রীদের জন্য পরিবেশন করা খাবারে একটি জীবিত পোকা পাওয়ার পর প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। পরে তা জানাজানি হলে টনক নড়ে ম্যানেজমেন্টের। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে আবারও বিএফসিসির দায়িত্ব দেয়া হয় বিমানের পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস ও স্টোর অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) আতিক সোবহানকে।
আতিক সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি তদন্ত করে দেখবেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা ফ্লাইটে না ঘটে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই