বাংলাদেশ কি পারবে প্যারিসের মতো হামলা ঠেকাতে?
প্যারিসে যে মাপের হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার জন্যে একদিকে ছিলো নিখুঁত পরিকল্পনা আর অন্যদিকে তার বাস্তবায়ন। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে লক্ষ্যবস্তু ছিল হয় পশ্চিমা স্বার্থ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু একটি বড় মাত্রার হামলা ঠেকাতে এই দেশটি কতটা প্রস্তুত?
প্যারিসে খুব নিরবে প্রস্তুতি নিয়ে যে হামলার ঘটনাটি ঘটলো, বলা যায় তা পশ্চিমা বিশ্বকে অনেকটা কাঁপিয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার জন্যে পরিকল্পনা করতে হয়েছে, অস্ত্র ও বিস্ফোরক জোগাড় করতে হয়েছে, খুঁজে বের করতে হয়েছে তাদের যারা ধর্মের নামে শহীদ হতে প্রস্তুত, এরপর এদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। আর পুরো কাজটি খুব সফলভাবে সমন্বয় করা হয়েছে।
তবে প্যারিস হয়তো এ ধরণের হামলার শেষ লক্ষ্যবস্তু নয় বলেই মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, “এর সাথে আমি মুম্বাই হামলার সামঞ্জস্য দেখতে পাচ্ছি। সেখানে ১০ জন শহরের নানা জায়গায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে দু’দিন ধরে ব্যস্ত রেখেছিল। আইএস-এর মূল যে এলাকা ছিল, সেখানে তারা চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। সুতরাং এটা একটা গ্লোবাল রূপ নিতে পারে।”
সফট টার্গেট অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা এর আগে অনেকবার ঘটেছে। আর তা ঘটেছে পুরো বিশ্ব জুড়েই। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা, যা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়েছে। বেশ কয়েকজন ব্লগার খুন হয়েছেন, খুন হয়েছেন বইয়ের প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক ও পুলিশ।
আর হামলার ঘটনা ঘটেছে এমনকি সেনা সদস্যের ওপরও। প্রায় কোন ঘটনারই কুল-কিনারা করা যায়নি এখনো। বাংলাদেশে প্যারিসের মতো বড় মাপের ঘটনার আশঙ্কা বিশ্লেষকরা পুরোপুরি নাকচ করে দিচ্ছেন না। তবে এ ধরণের ঘটনা ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন আরেকজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান।
তিনি বলেন, “এরা তো মাইনোরিটি। তাদের মূল অস্ত্র বন্দুক কিংবা বোমা না। তাদের মূল অস্ত্র সারপ্রাইজ দেয়া। মানসিক প্রস্তুতি অর্থাৎ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখানো খুব জরুরি এখানে। তাহলে বাকি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মি. খান মনে করেন, জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়ে গবেষণা করছেন নূর খান।
তিনি বলছেন, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশী জোর দেয়া হচ্ছে, কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনুসন্ধানের দিকে, কিন্তু এসব ঘটনা প্রতিরোধে যেসব কাজ জরুরি, সেগুলো হচ্ছে খুবই কম।
“কাউন্টার টেরোরিজমের ক্ষেত্রে কিছু কাজ হচ্ছে, কিন্তু যে মাত্রায় হওয়া দরকার সেই মাত্রায় হচ্ছে না। গোয়েন্দা তৎপরতা, গোয়েন্দা সরঞ্জাম ও দক্ষতার অভাব রয়েছে।” বলেন তিনি।
নূর খান মনে করেন কেবলমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা সামরিক বাহিনীর পক্ষে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না। তার সুপারিশ হলো, গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করা। আর এর সাথে একমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।
তিনি বলেন, “এটা একটা চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিকভাবে এটাকে ফেস করতে হবে। একটা সামগ্রিক শান্তি আন্দোলন বা সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত তৈরি গঠন করা প্রয়োজন।” সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে বাংলাদেশে পুলিশের একটি কাউন্টার-টেরোরিজম ইউনিট গঠন করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ঐ প্রস্তাবে খুব একটা সাড়া মেলেনি।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে র্যাব হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী বাহিনী।
– বিবিসি বাংলা
মন্তব্য চালু নেই