বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের অভিন্ন সুর

বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতায় গত এক সপ্তাহ থেকে একই সুরে বক্তব্য, বিবৃতি দিচ্ছে বিশ্বের প্রভাবশালী তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত। সম্প্রতি ৩টি দেশ থেকেই বিএনপির ২০ দলীয় জোটের অবরোধে সংঘটিত কর্মকান্ডকে সহিংসতা বলে উল্লেখ করে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে এই তিন দেশ।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিষয়ে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী বিরোধী পন্থায় থাকলেও কৌশলগত কারণে এই নীতি থেকে তারা সরে আসছে। এর মূল কারণ হলো ভারতের সঙ্গে নিবিড় ও আস্থাশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় দেশটি। ফলে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের সুরেই যুক্তরাষ্ট্র চলবে।
একজন কূটনীতিক জানান, কৌশলগত কারণে হোক আর যেভাবেই হোক গত ২৫ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের পরই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয়ে ভিন্ন মত দিয়েছে। এ থেকে স্পষ্টই বোঝা গেলো, বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর কিছুটা নির্ভরশীল। কারণ এর আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্ল–ম বার্নিকাট নিয়োগ পাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ ও গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এখন অনেকটা চুপ। আবার মিশনে যোগ দেওয়ার আগেই বার্নিকাট ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করলেন। যদিও উভয় পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটা সৌজন্য সাক্ষাত। কিন্তু কূটনৈতিক মহল বলছে, ওবামা ও নরেন্দ্র মোদীর আলোচনার ফলোআপ হলো এই বৈঠক।
এদিকে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যও হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা, পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়ে মরার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক এক রাষ্ট্রদূত বলেছেন, কূটনৈতিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অনেকদিন থেকেই গাঁটবাধা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেদিকে ঝুঁকবে সেদিকেই যুক্তরাজ্য সায় দিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অন্য যে কেনো সময়ের চেয়ে এবারের সরকারের কূটনৈতিক সফলতা বেশি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক অনেক বেশি ভালো। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা যাবার আগে নিজ মুখে বলে গিয়েছেন। তাছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেও বারবার একথা বলা হচ্ছে। এর সত্যতা পাওয়া যায়, এবারের বাজেটেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ অনেক বেশি বাড়িয়েছে। একটি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকলে বিনিয়োগ বাড়ানো হতোনা।
এর সঙ্গে ভারতের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা তো আমি বলতে পারবো না। তবে বর্তমান সরকার কূটনৈতিকভাবে সফল। আওয়ামী লীগ যে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিনিধি এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ এটা বিশ্বের বুঝতে বাকি নেই। বিগত সময়ে বিএনপি জামায়ত জোট আওয়ামী লীগ ও দেশকে বিশ্বের কাছে খাটো করার চেষ্টা করেছে। তারা এখনো করেই যাচ্ছে। কিন্তু এবার বিএনপির পেট্রলবোমার ঘটনা দেখে সবাই বিস্মিত।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত বিএনপির এই আন্দোলনকে সহিংসতা হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যেই বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এসব দেশ খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে সহিংসতা কখনোই রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। আর এই ধরনের সহিংসতা সৃষ্টিকারী দলের প্রতি তাদের কোন ধরনের নৈতিক সমর্থনও নেই।
উল্লেখ্য, বিএনপি জোটের টানা অবরোধে চলমান নাশকতা ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার নাক গলাবে না বলে স্পটভাবে জানিয়ে দিয়েছে। ভারত সরকারের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে কোন ধরনের সিদ্ধান্তে যাওয়ার এখতিয়ার ভারত সরকারের নেই। আমরা শুধু এটাই চাই, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ ভাল থাকুক। ভারতের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিএনপি জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে পেট্রলবোমা মেরে নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনাকে ‘জঘন্যতম কাজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে দেশে চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে এসব সহিংসতার ঘটনার তদন্তও চেয়েছে দেশটি। যুক্তরাজ্য বলেছে, গত এক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতায় অর্ধশতাধিক প্রাণহানি, কয়েক শ’ লোকের বীভৎসভাবে আহত হওয়ার ঘটনায় তারা স্তম্ভিত। যুক্তরাজ্য বলেছে, সহিংসতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মন্তব্য চালু নেই