বাংলাদেশে আত্মঘাতী হামলার আশঙ্কা: ভারতীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদন
বাংলাদেশে আত্মঘাতী হামলার আশঙ্কা করা হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) তৎপরতা সম্পর্কে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনআইএ।
গত বৃহস্পতিবার এনআইএর এক এসপির নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি টিম ঢাকায় র্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের এ বৈঠকের বিষয়টি গোপন রাখা হয়। মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় ও বিমানবন্দরে র্যাব সদর দপ্তরে এ বৈঠক দুটি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তারা ডিবি ও র্যাবকে বাংলাদেশে জেএমবির তৎপরতা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের মতো কোনো ঘটনা বাংলাদেশে জেএমবিরা ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যে কোনো জনাকীর্ণস্থানে ভয়ঙ্কর ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে। এজন্য তাদের হাতে প্রচুর বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র আছে। এরা পশ্চিমবঙ্গে আর্থিকভাবে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি বলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।
তবে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনআইএর এ প্রতিবেদনের আগেই পুলিশ ও র্যাব জেএমবির বর্তমান কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামিনে মুক্তি পাওয়া জেএমবির নেতাকর্মীদের নজরদারীতে রাখা হচ্ছে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এনআইএর এসপি ডিবি ও র্যাবকে জানান, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন জেএমবি নেতা আবারো বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তারা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান পাওয়া যায়। তারা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে ভারতের মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ব্যবহার করে। ভারতের জঙ্গিদের (সন্ত্রাসী) সঙ্গে কথা বলে। আবার ভারতের সীমান্ত থেকে তাদের দেশের জঙ্গিরা বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ব্যবহার করে কথা বলছে। ফলে প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে জঙ্গি দমনে দু’দেশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, জেএমবির কার্যক্রমকে অত্যন্ত বিপদজনক জানিয়ে ভারতের এনআইএ জানায় বগুড়া, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও সিলেট এ চার এলাকা ভাগ করে জেএমবির গোপন হামলা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় আবারও শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে জেএমবি।
এনআইএর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, জেএমবি যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের বগুড়া এলাকার তালহা বর্তমানে ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছে। তালহার সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত মিজান ও সালেহীন ওরফে সালেহউদ্দীনের যোগাযোগ ঘটেছিল।
এনআইএর টিম ধারণা করছে, ময়নসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনতাই করা দুর্ধর্ষ জঙ্গিযোদ্ধা মিজান ও সালেহীন বর্তমানে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তবে এ ব্যাপারে ডিবি ও র্যাবের পদস্থ কর্মকর্তারা এনআইএর টিমকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশে নয়, ভারতের বিহার অথবা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আত্মগোপন করেছে। গত বছরের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে জেএমবির ঘাঁটিতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় এনআইএ তদন্ত করে চলতি বছরের ৩০ মার্চ ২১ জনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট দেয়। এ ২১ জন আসামির মধ্যে ৫ জন পলাতক আছে। এরা পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে দাবি এনআইএর।
এনআইএর প্রতিবেদনে জেএমবির শতাধিক ক্যাডারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং জেএমবির এসব ক্যাডারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বাংলাদেশের পুলিশ ও র্যাবকে এনআইএর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: বাংলামেইল
মন্তব্য চালু নেই